চলতি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের পারফরম্যান্স দেখে একদমই বোঝার উপায় নেই, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ভারতে গিয়ে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে জস বাটলারের দল। এমন অবস্থায় ওয়েন মর্গ্যান বলছেন, খেলাধুলার ইতিহাসেই এই ইংল্যান্ডের মতো বাজে পারফর্ম করা দল আর দেখেননি তিনি। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচ থেকেই ইংল্যান্ডের সাদামাটা প্রদর্শনীর শুরু। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮২ রানের পুঁজি নিয়েও কোনো লড়াই করতে পারেনি তারা। স্রফে ৩৬.২ ওভারে ম্যাচ জিতে নেয় কিউইরা। পরের ম্যাচে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারালেও জয়ের ধারায় থাকতে পারেনি জস বাটলারের দল। হেরে যায় আফগানিস্তানের কাছে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৯৯ রান তাড়ায় নূন্যতম লড়াইও করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ১৭০ রানে অল আউট হয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয়ের তিক্ততা সঙ্গী হয় তাদের। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। আরও একবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্রফে ১৫৬ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর বোলিংয়েও কিছু করতে পারেনি তারা। ২ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে যায় লঙ্কানরা। পাঁচ ম্যাচে স্রফে এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে রয়েছে ইংল্যান্ড। গাণিতিক হিসেবে এখনও বেঁচে আছে তাদের সেমি-ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা। এমনকি আরও একটি ম্যাচ হারলেও 'যদি-কিন্তু'র ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকবে তাদের আশা। তবে দলের প্রধান কোচ ম্যাথু মট আশা ছেড়ে দিয়েছেন এরই মধ্যে। স্কাই স্পোর্টসে ২০১৯ সালে দেশটির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মর্গ্যান বলেছেন, ইংল্যান্ড দলের ভেতরে কাজ করছে অস্থিরতা। “আমার মতে, (দলের মধ্যে) ভিন্ন কিছু চলছে। অবশ্যই কিছু না কিছু আছে। আমি কখনও কোনো খেলায় এমন দল দেখিনি যারা ইংল্যান্ডের মতো আন্ডারপারফর্ম করেছে। বিশেষ করে তাদের কাঁধে যেমন প্রত্যাশা ছিল।” “দলের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই কোনো অস্থিরতা রয়েছে। তারা যে কৌশল ব্যবহার করতে চাচ্ছে এবং যেভাবে ম্যাচগুলো হেরেছে, এটি অবশ্যই ড্রেসিং রুমের ভেতরে মনোবল ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা রাখে। স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থায়ই থাকার কথা এটি।” ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের পর মর্গ্যানের নেতৃত্বে আমূল বদলে যায় ইংল্যান্ডের খেলার ধরন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্রে ২০১৯ সালে ওয়ানডে, ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে তারা। চলতি আসর শুরুর আগেও কাগজে-কলমে শিরোপার দাবিদার ছিল দলটি। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে পড়েনি এর প্রতিফলন। গত ৭-৮ বছরে যেভাবে খেলে সাফল্য মিলেছে, সেই পথ অনুসরণের পরামর্শই দিলেন মরগ্যান। “আপনি যদি এই দলের শক্তির গভীরতা দেখেন, বিশেষ করে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে অন্যান্য যে কোনো দলের মতোই শক্তিশালী ইংল্যান্ড। কিন্তু তারা এখনও তেমন কিছু করতে পারেনি।” “তারা দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভুল করেছে। টুর্নামেন্ট জেতার কথা বাদ, একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল করার ক্ষেত্রেও তাদের ভুগতে হয়েছে। এটি জস (বাটলার) ও তার দলের জন্য অবিশ্বাস্যরকমের চ্যালেঞ্জিং। দীর্ঘ দিন ধরে যে পদ্ধতিতে তারা দুই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেটি ব্যবহার করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে হবে।” ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে লক্ষ্ণৌতে রোববার ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত। সপ্তাহ দুয়েক আগে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ব্যবহৃত পিচেই হবে ভারত, ইংল্যান্ডের ম্যাচ। মরগ্যানের মতে, প্রতিপক্ষ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন পিচে খেলা হলে সুবিধা হতো ইংলিশদের।“(ভারত ম্যাচের জন্য) সময়টা আসলে এর চেয়ে আর বাজে হতে পারত না। ঘরের মাঠে এই টুর্নামেন্টে এমনিতেই পরিষ্কার ফেভারিট ভারত। তাদের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জটা বড় হয়ে গেছে এখন, যেটা হয়তো নতুন পিচে খেলার চেয়ে অনেক বেশি।”