রাজশাহীতে নগরীতে আনুমানিক তিন ঘন্টার ব্যবধানে এক জোড়া চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অপহরণ করে হোমিও চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলালকে ও নিজ চেম্বারে রোগী দেখে বাড়ী ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজেম আলী আহমেদ নামের অপর চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে ঘটে যাওয়া পৃথক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সোমবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই গ্রেপ্তার করতে না পারায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে একই রাতে দুই চিকিৎসককে এমন নির্মমভাবে হত্যা করার কী কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে নগরবাসীর মনে কৌতূহল জেগেছে। ঘটনাটি নিয়ে পরিবহন কিংবা চা-স্টলেই শুধু নয়, আলোচনা চলছে বাসা বাড়িসহ সর্বস্তরে। যেন মূহুর্তের মধ্যেই মানুষের মধ্যে চলা বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনির বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ হয়ে গেছে। নিহত গ্রাম্য চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলাল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) চন্দ্রিমা থানাধীন কচুয়াতৈল এলাকার শমির উদ্দিনের ছেলে এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ গোলাম কাজেম আলী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন উপশহর এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সংশ্লিষ্ট দুই থানার সূত্র বলছে, পূর্ব শক্রতার জেরে গ্রাম্য হোমিও চিকিৎসক এরশাদ আলী দুুলালকে (৪৫) রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চন্দ্রিমা থানাধীন তার চেম্বার থেকে ফিল্ম স্টাইলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আনুমানিক রাত পৌনে ৯টার দিকে কুপিয়ে হত্যা করে শাহমখদুম থানাধীন সিটিহাট এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজেম আলীকে (৪২) একই রাত পৌনে ১২টার দিকে নিজ বাসা উপশহরে ফেরার পথে বর্ণালী মোড়ে মোটরসাইকেল গতিরোধ করে একদল দুর্বৃত্তরা তার বুকে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু ঘোষণা করা হয়। নিহত কাজেম আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ৪২তম ব্যাচে এমবিবিএস পাস করেন। পরে এফসিপিএস (ডারমাটোলোজি) ও ডিডিভিসহ (বিএসএমএমইউ) বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেন। সবশেষ ডা. কাজেম আলী রাজশাহীর ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল এবং পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখতেন। নিহতের আগে তিনি প্রতিদিনের মতো লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বার শেষে বাড়ী ফিরছিলেন। তার স্ত্রীও একজন চিকিৎসক বলে জানা গেছে। এদিকে, মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে একই রাতে দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাজশাহী নগরীতে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকারি ও ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করলেও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) দায়িত্বরত কর্মকর্তার (ডিসি) সাথে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতদের মরাদেহের ময়না তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট পৃথক থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। আর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের সন্ধান ও গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই আরএমপি প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।