ইসরাইল-হামাস সংঘাতের হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতিতে ‘মন্দা অবস্থা’ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই সংঘাত তীব্রতর হলে তথা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এতে জড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী ‘তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা’ দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশ্ব অর্থনীতিতে এই যে ঝুঁকির আশঙ্কা, একে বাস্তবসম্মত চিন্তা হিসেবে না মেনে উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, রাশিয়াসহ সবাই পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নিজস্ব অবস্থান নিচ্ছে। রাজনীতির পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক অবস্থানেরও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। চলমান সংঘাতে ইরানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে বিভিন্ন পক্ষের সরাসরি সংঘর্ষের মাঠে নেমে পড়ার আশঙ্কা অযৌক্তিক চিন্তা নয়, এবং সে ধরনের পরিস্থিতিতে জ্বালানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে চরম অস্থিতিশীলতা ও সংকট। অনুমান করা যায়, জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৫০ মার্কিন ডলারে উঠে যাবে, যা এখন অবধি ৯০-১০০ ডলারের ঘরে ওঠানামা করছে। মনে রাখা জরুরি, মধ্যপ্রাচ্য হলো জ্বালানি উৎপাদনের প্রধানতম অঞ্চল। এই অঞ্চলে সংঘাত সৃষ্টি মানে গোটা বিশ্বের জ্বালানি-সংকটের মুখে পড়া। এতে করে জ্বালানির প্রশ্নে এমন কঠিন সংকটের মুখে পড়বে বিশ্ব, যা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির পুনরুদ্ধারকে শুধু ব্যাহতই করবে না, করে তুলবে ‘অসম্ভব’। চিন্তার বড় কারণ, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও পড়বে মারাত্মক হুমকির মুখে। জ্বালানি তেল এমন একটি পণ্য, যার দামের ওপর অন্যান্য প্রায় সব জিনিসের দাম নির্ভর করে। ভূরাজনীতিতে জ্বালানি তেল একটি অন্যতম অস্ত্র, যা বড় শক্তিরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকে। ওয়েলপ্রাইসডটকম অনুযায়ী, ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে বেড়েছে গড়ে তিন ডলার। অন্যান্য পণ্যের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরাও কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রভাব থেকে বাংলাদেশও বিচ্ছিন্ন নয়। স্বল্প সময়ের জন্য হয়তো এর প্রভাব তেমনভাবে অনুভূত না হলেও, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। কৃষিপণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ সব ক্ষেত্রে জ্বালানি তেলের সম্পর্ক রয়েছে। তেলের দামের ওঠানামার সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের দামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।’ মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার। শুধু সৌদি আরবেই প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাই সরকারসহ দেশের জনগনকেও যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকা দরকার।