পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। আর খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়ায় ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে- ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন খেটে খাওয়া মানুষের এক কেজি মোটা চাল কিনতে ৫৬-৫৭ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর মাঝারি ও সরু চালের দামও লাগামছাড়া। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের মূল্যে উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম অনেকদিন ধরেই খাটছে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না। অটোরাইস মিল মালিক সমিতি সূত্র জানায়, আমন ফসল কাঁটার মৌসুমকে সামনে রেখে ধানের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে কারণে মোটা চাল তৈরিত ব্যাঘাত হচ্ছে। সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের তুলনায় চিকন চালের দাম ততটা বাড়েনি। এ ছাড়া সরকার চাল কিনে নানা ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি ও সহায়তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে সহায়তা করছে। চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মিলাররা চাল নিয়ে আবারও কারসাজি করছে। দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। ফলে পাইকারি পর্যায় থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি জানান, ৭ দিনের ব্যবধানে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা বেড়ে সরু চাল ৬৫-৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল, যেটা গরিব মানুষ বেশি কেনে সেই চাল বিক্রি করছি ৫৬-৫৭ টাকা। যা ৭ দিন আগে ৫৪ টাকা ছিল। কৃষি বিভাগের তথ্যমতো, শুধু দিনাজপুরে এবার ২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আর চালের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৭৭ হাজার টন। মিলাররা সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। চাল কাঁটার মৌসুম এলেই মিলাররা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই হয়েছে। চালের দাম কেন বেড়েছে তা তদারকি করে বের করতে হবে। মিল থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তদারকি করতে হবে। সরকার ও সংশ্লিষ্টদের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে বাজারে চাল কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়বে।