মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতির নানা উপাদানের উপর নির্ভর করে মানুষ জীবন ধারণ করে। সেসব উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো পানি। পানি প্রতিটি জীবের বেঁচের থাকার প্রধান উৎস। একজন দুজন নয় কোটি কোটি প্রাণীর জীবন মরণে সঙ্গী পানি। তাই পানির আরেক নাম হলো জীবন। আপাতত দৃষ্টিতে পৃথিবীতে পানির উৎস অফুরন্ত মনে হলেও অপচয় করলে কোনো সম্পদই থাকে না শেষ পর্যন্ত। পানিও তার বহির্ভূত নয়। ধীরেধীরে পৃথিবীর ভূগর্ভের পানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে অদূর ভবিষ্যতেই পুরো পৃথিবী পানি শূন্য হয়ে পড়বে। পৃথিবীতে আজ মিঠা পানির চরম সংকট। এর জন্য মূলত দায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, পানির অপচয়, দূষণ ইত্যাদি। ভূগর্ভস্থ পানি যে হারে উত্তোলন করা হচ্ছে সেই হারে পূরণ হচ্ছে না। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টির পানি ভূমিতে পড়লে তা ঘাস, মাটি ও গাছের শিকড়ের মাধ্যমে পরিশোধিত হয়ে ভূগর্ভস্থ পানি জমা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে খোলা মাটির দেখা পাওয়া যায়না। সেইসঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে কমছে গাছ। বাড়ছে কংক্রিটের দালান ও পিচের রাস্তা। ফলে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভে পৌঁছানোর সুযোগ পাঁচ্ছে না। বিশ্বের অনেক মানুষ এখনো পর্যাপ্ত পানি পানের সুযোগ পায় না। বিশ্বের অনেক দেশেই বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্যগুলো রয়েছে তার মধ্যে ৬ নম্বরে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে সব মানুষের জন্য সুপেয় বা বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ মানুষের আওতার মধ্যে পানির কোনো উৎস রয়েছে। কিন্তু এর সবটাই পানযোগ্য নয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির যেসব উৎস রয়েছে সেগুলোও ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে পড়ছে। বেশ কিছু উপায়ে এই পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব। নিত্যদিন মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় পানির ট্যাপ বন্ধ রাখতে হবে। অপ্রয়োজনে টয়লেট ফ্লাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে প্রচুর পানি অপচয় হয়। পুকুর, খাল ও নদীতে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে করে মিঠা পানির দূষণ কমানো সম্ভব হবে। পানির ট্যাংকে পানি ওঠাতে গিয়ে বেশীরভাগ সময়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করা হয় এবং অতিরিক্ত পানি উপচে পড়ে অপচয় হয়। কিন্তু একটু সচেতন হয়ে সময়মতো পাম্প বন্ধ করলেই পানির অপচয় রোধ সম্ভব। দেশে পানির অপচয় রোধে গৃহস্থালি সহ সকল শিল্পণ্ডকলকারখানায় ব্যবহৃত পানি রিসাইক্লিং করে ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে। বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ পানির অনেক বড়ো একটি উৎস। এই পানি জমা করে তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার এমনকি পান করাও সম্ভব। তাই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। অপচয় করলে কোনো সম্পদই থাকে না শেষ পর্যন্ত। তাই ব্যবহারকারীদের মাঝে অপচয়ের বিরুদ্ধে নৈতিক সচেতনতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। কাজেই আমাদের যে অমূল্য সম্পদটা রয়েছে, এই সম্পদটা আমরা কীভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারি বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ব্যবহার করতে পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। দেশের কথা ভেবে, সমাজের কথা ভেবে, যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ও সচেতন হলে পানির সংকট দূর করা সম্ভব হবে।