রাজধানীর অর্ধেকের বেশি রাস্তা ভাঙ্গাচোরা হয়ে পড়ে আছে, যা প্রায় সারাবছরই সবার নজরে পড়ে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সুনির্দিষ্ট ভিআইপি সড়ক ছাড়া রাজধানীর প্রায় সব সড়কেরই একই হাল বিরাজ করছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে দীর্ঘ সময় রাজধানীর বিভিন্ন প্রধান সড়কে চলাচল স্বাভাবিক ছিল না। সম্প্রতি এসব উন্নয়ন কাজের বেশিরভাগই সম্পন্ন হওয়ায় সড়কগুলো সংস্কার ও বিভিন্ন জায়গায় প্রশস্ত করা হয়েছে। তবে নতুন সংস্কার কাজের পরও সড়কগুলো মসৃণ হয়নি। দুর্বল নির্মাণ ও সংস্কারকাজ, পরিকল্পনাহীন রাস্তার উন্নয়নকাজ ও সঠিকভাবে পরিদর্শনের অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। মূলত রাজধানীর সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি কর্পোরেশনেরই মূল দায়িত্ব হলেও খোদ রাজধানীতে কয়েকটি সংস্থার রাস্তা থাকায় এসব রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারে সমন্বয়হীনতা কাজ করে। এর ফলে একেকটি সংস্থার একেকটি সময় ও তাদের বরাদ্দ অনুযায়ী রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করে থাকে। ফলে ভাঙ্গাচোরা রাস্তার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এ ছাড়া রাস্তা সংস্কারেও নানা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়। রাজধানীর সড়কের বেহাল দশা মিডিয়ায় তুলে ধরলেই কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। এর বাইরে নিজ উদ্যোগে এসব রাস্তার সংস্কারকাজের প্রয়োজনীয়তা খুবই কম অনুভব করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সড়ক মেরামতে বা সংস্কারে প্রতি বছর বিপুল অর্থ বরাদ্দ থাকলেও সঠিকভাবে এসব অর্থের ব্যবহার না করায় সড়কগুলো সংস্কারের কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙ্গে পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় আবার গর্ত। আর এসব গর্তে পানি জমে প্রতিনিয়তই গর্তগুলো বড় আকার ধারণ করে। এসব সড়কের কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। বিশেষ করে ম্যানহোলের মুখগুলো সড়ক থেকে বেশ কয়েক ইঞ্চি নিচে থাকে। এছাড়াও কিছু সড়কে দীর্ঘদিন কার্পেটিং না করায় নুড়ি পাথর উঠে যাচ্ছে। আর কিছু সড়ক এখনও সংস্কার না হওয়ায় একেবারেই ভাঙাচোরা বেহাল অবস্থা। রাজধানীর এমন কিছু সড়ক রয়েছে যেসব সড়কে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করতে হয়। ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড ট্রান্সপোর্ট স্টাডির তথ্যানুযায়ী, সব মিলিয়ে ঢাকায় সড়কের দৈর্ঘ্য তিন হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রাইমারি সড়ক রয়েছে ২০০ কিলোমিটার। এর বাইরে সেকেন্ডারি সড়ক রয়েছে ১১০ কিলোমিটার, ফিডার (শাখা) সড়ক ১৫০ কিলোমিটার ও সঙ্কীর্ণ রাস্তা দুই হাজার ৫৪০ কিলোমিটার। রাজধানীর সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে একাধিক সংস্থা। এর মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রয়েছে। তাই খুব দ্রুত সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শুধু সংস্কার করলেই হবেনা এর পাশাপাশি সকল রাস্তার সংস্কারের সময় এর স্থায়িত্ব ও গুণগতমান নির্ণয়ে দুই সিটির মেয়রদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।