অর্থনীতি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সূচকে দেশ এগিয়ে গেলেও নারীদের উচ্চশিক্ষার পথ এখনো দুর্গম। দেশে উচ্চমাধ্যমিকস্তর থেকে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে নারীরা। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষায় নারীদের উপস্থিতি বেশি হলেও উচ্চমাধ্যমিকথেকে উচ্চশিক্ষা স্তরপর্যন্ত এ চিত্র ঠিক উল্টো। পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রতিকূল সমাজব্যবস্থা, সদিচ্ছার অভাবে নারীর উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে আছে। এছাড়া, চাকরিক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশও নারীর উচ্চশিক্ষার পথে বড় বাধা। এছাড়াও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই রয়েছে নানা জটিলতা। তবে কিছু সমস্যা আছে, যা শুধু নারীর ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে সক্ষম হন হাতগোনা কিছু সংখ্যক নারী শিক্ষার্থীরা। সেই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীরাও মুখোমুখি হন নানা প্রতিবন্ধকতার। অভিভাবকের মনমানসিকতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, প্রতিকূল সমাজব্যবস্থা, নিরাপত্তাহীনতা ও সদিচ্ছার অভাবে নারীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণে পিছিয়ে আছেন। বেশিরভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন মনে স্বপ্ন জাগে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেবে। কিন্তু অনেকের এই স্বপ্ন শুধুই স্বপ্নে থেকে যায়। কেননা মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে নেমে যায় সংসারে। কেউ কেউ সংসার আর চাকরি নিয়ে সময় পার করলেও অনেকে একেবারে পাক্কা গৃহিণী হয়ে জীবন পার করে দেন। ‘আবার অনেক নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পান না। তাই পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে উচ্চশিক্ষায় নারীদের সংখ্যা বাড়বে। তবে নারীকে শুধু উচ্চশিক্ষিত হলেই চলবে না, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও অংশ সুনিশ্চিত করতে হবে। এতে অর্থনৈতিক সাবলম্বিতার পাশাপাশি সে তার অর্জিত শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রয়োগ করতে পারবে।’ তাই গ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহী করা এবং উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে একটি সুস্থ ও অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ দূর করার লক্ষ্যে কঠোর আইন বাস্তবায়িত করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় সরকারি সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে, তবেই উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চ হবে, যা দেশ ও জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নানা পদক্ষেপ নিতে পারে, দেশের বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ভাবে কাজ করতে পারে। সরকারের উচিত মেয়েদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় বাড়ানো। যেন মেয়েদের শিক্ষার সব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।