কেউ যদি আপনাকে অতি গোপনেও ঠকায়, পৃথিবীর কেউ যদি সেটা না জানে এমনকি আপনিও, তবুও সেটা বিনিময়হীন যাবে না। কাউকে ঠকালে, হৃদয় খুঁড়ে ব্যথা দিলে, অধিকার ছিনিয়ে নিলে সেটার বিনিময় এই আলোতেই পেতে হবে। আপনিও হয়তো জানবেন না আপনাকে ঠকানো ব্যক্তির কী ক্ষতি হলো কিন্তু প্রকৃতির বিচার ন্যায্যতার নীতির বাইরে যায় না। কোথাও ঠকালে কোথাও না কোথাও ঠকতে হবে। অন্তত চিত্তে এমন অনুশোচনা জাগবে যা হৃদয়ের প্রশান্তি কেড়ে নিবে কিন্তু প্রায়শ্চিত্তের কোন পথ থাকবে না। এই অনন্ত দহনের মর্মজ্বালা সাংঘাতিক! যে পুড়েছে সে বুঝেছে!
আপনি যদি কারো দীর্ঘশ্বাসে থাকেন তবে আপনার পতন ঠেকাবে এমন সাধ্য কার? ইচ্ছে করে কাউকে কষ্ট দিলে, কাউকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করলে সেটা আপনার বিরুদ্ধে পুঁজি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। পৃথিবীর বদ্ধতম কুঠুরিতে বসেও যদি কারো ক্ষতি করেন, ক্ষতির চিন্তা করেন তবে আপনার ক্ষতির জন্য আরও শক্তিশালী এবং অব্যর্থ ক্ষতির পরিকল্পনা হচ্ছে! এই দুনিয়ায় ঠগ সবচেয়ে বেশি ঠকে! কাউকে ঠকিয়ে সরাসরি কোন শাস্তি না পেলেও ভাবার সুযোগ নাই যে, কিছুই হবে না! বহুকিছু হবে, বহুপথে পাবেন। একসময় দেখবেন আপনার সম্ভাবনা ফুরিয়ে গেছে, পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, মানসিকতায় জীর্ণ হয়ে গেছেন।
এটা না পেয়ে যদি ওটা পেতেন, একটা কিছু যদি পেতেন-এমন ভাবনায় যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় সেটাও কোন না কোন ভুলের শাস্তি। মানসিক প্রশান্তির অনুপস্থিতির চেয়ে বড় কোন প্রতিশোধ আর কি আছে? সর্বদা দুশ্চিন্তায় থাকা, হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া, কারো হাসির কারণ না হওয়ার চেয়ে বড় তাপ আর কিছ হয় না! কারো বিশ্বাস ভাঙলে, কাউকে দুঃখ দিলে ঢেউয়ের উল্টোদিকটা আপনার জন্য অপেক্ষা করবে। কাউকে যতটুকু ভেজাবেন অন্তত ততটুকু কিংবা তার অধিক আপনাকেও ভেজার প্রস্তুতি রাখতে হবে। এমনকি আপনি পুরোপুরি ডুবেও যেতে পারেন!
ক্ষমতা আছে, শক্তি আছে কিংবা সুযোগ আছে বলে যা খুশি তা করা যায় না। অন্যের অধিকার-পাওনা গিলে ফেলাটা আরও পাপের বীজ লাগানো! যে বৃক্ষ পাপের সে বৃক্ষের পতনেই আপনাকে চাপা পড়তে হবে। এমন এমন অপরাধ আছে যেটার পরিতাপের সুযোগ থাকে না। কারো মনে প্রচন্ড আঘাত দিলে সেটার ক্ষতিপূরণ কী? কাজেই জিহ্বাস্ত্র এবং হস্তাস্ত্র ব্যবহারের সময় অতি সাবধান এবং পূর্ণ বিবেচনাধীন বিবেকের অধীনে থাকতে হবে। মনের গোপনাস্ত্র জীবনভর দমন করে রাখবেন। শুধু ভালোবাসা-শ্রুদ্ধা-স্নেহ-সম্মানটুকু বের করবেন!
কারো উপকার করতে না পারাটা অপরাধ নয়। কিন্তু কারো ক্ষতি করলে সেটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। এমন কাজ, তেমন কথা বলা ঠিক হবে না যেটা মানুষকে ব্যথা দেয়। চুপ থাকার মধ্যে মঙ্গল আছে। সুচিন্তার মধ্যে কল্যাণ। আপনার পা এই মাটিতে আর বেশিদিন থাকবে না কিন্তু এমন কিছু পদচিহ্ন রেখে যান যেটা আলোয় ভূবন ভরাবে। আপনাকে স্মরণ করাবে। এই পৃথিবী ঠিক ততোখানি সুন্দর যতোখানি সুন্দর আপনি! আপনার আলোয় আশপাশের ভালো থাকার যে সুযোগ আছে নিশ্চয়ই সেটা হাতছাড়া করবেন না। একটু বিনয় ভূষণ করুন। মানুষের সাথে একটু হাসুন। কাউকে ক্ষতি করার মানসিকতা মুক্ত জীবন গড়ুন। ভালো রাখার সাথে ভালো থাকা জড়িয়ে। আপনি এটাকে মাড়িয়ে যাবেন না! (রাজু আহমেদ, কলামিস্ট)