আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকেন। কারণ দেশের বিভিন্নস্থানের হাসপাতালে অসংখ্য যন্ত্র নষ্ট ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এমন অবস্থা চলছে সারাদেশেই। শুধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকজনের অভাবের জন্য যেমন কোনো কোনো যন্ত্রের ব্যবহার করা যাচ্ছে না, তেমনি আবার কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন লোকজন না থাকায় কিছু যন্ত্র বসানো বা স্থাপন করাই সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অজ্ঞতা, অদক্ষতা, অমনোযোগ ও অবহেলায় অসংখ্য যন্ত্র পড়ে আছে। আর সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ মানুষ। দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যতটুকু স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ রয়েছে, তা-ও অব্যবস্থাপনায় ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় যথাযথ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্যে মানুষের নিজস্ব ব্যয় বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও জেলা পর্যায়সহ ৮৪টি হাসপাতালে তিন হাজার ৩৩১টি যন্ত্র অচল। অবশ্য, সারা দেশে ছয় শতাধিক সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে কত যন্ত্র অচল, তার হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এই ৮৪টি হাসপাতালের প্রতিটিতে গড়ে ৪০টি যন্ত্র অচল অবস্থায় আছে। অন্যদিকে, এসব হাসপাতালে একেবারে ব্যবহার-অনুপযোগী যন্ত্র আছে ৯৩৩টি। এগুলো মেরামতের অযোগ্য। গড়ে প্রতিটি হাসপাতালে এ ধরনের যন্ত্র আছে ১১টি। এই যন্ত্রপাতির দামের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দামের গড় থেকে একটি হিসাব পাওয়া যেতে পারে। এভাবে হিসাব করলে ৮৪টি হাসপাতালে অচল থাকা তিন হাজার ৩৩১টি যন্ত্রের আনুমানিক দাম ৮০০ কোটি টাকার উপরে হবে। সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়, ব্যবস্থাপনা ও মেরামতে কেন্দ্রীয় কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। তাই নিয়মের ফাঁক গলিয়ে অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা সম্ভব হয়। আবার প্রয়োজনীয় যন্ত্র খুব ছোট ত্রুটির কারণে অব্যবহৃত পড়ে থাকে। কেউ সারানোর উদ্যোগ নেন না। তবে সঠিক চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে রোগ নির্ণয় দরকার। কিন্তু সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক যন্ত্রপাতি নেই। সাধারণত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সেবা শাখা থেকে সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়। যা পাঠানো হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। দরিদ্র রোগীরা সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে না পেরে নিয়মিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই দরিদ্রদের চিকিৎসা পাওয়া সহজ করতে সরকারি হাসপাতালের যেসব যন্ত্রপাতি অচল পড়ে আছে তা সচল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে।