মানব পাঁচার আধুনিক সত্যতার একটি নিকৃষ্টতম ঘৃণিত সামাজিক অপরাধ। মানব পাঁচার সমস্যাটি স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়। কারণ স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের দারিদ্র্যের সুযোগে একশ্রেণির অসাধু মানুষ মানব পাঁচারের কাজে লিপ্ত হয়। যদিও বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, তারপরও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় মানুষের বিদেশের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। জীবিকা আর উন্নত জীবনের আশায় প্রতি বছর দেশ ছাড়েন লাখো লাখো মানুষ। এদের স্বপ্ন একটুখানি সুখ আর সমৃদ্ধির। দুঃখজনক হলেও এসব স্বপ্নচারী মানুষের বেশির ভাগই পড়েন মানব পাঁচারকারীর খপ্পরে। পাঁচারকারী সিন্ডিকেটের ভয়াবহ নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে বিস্তৃত। মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঁচার করে থাকে। এ ছাড়া বর্তমানে মানব পাঁচার চক্রের কর্মকাণ্ডে নতুন সংযোজন হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। আর এই ক্ষেত্রে পাঁচারকারীদের মূল টার্গেট থাকে নারী, শিশু ও কিশোরীরা। আবার বাংলাদেশে এখনো বেকার তরুণ ও যুবকের সংখ্যা অনেক। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় দেশি-বিদেশি মানব পাঁচারকারী চক্র। উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিবছর শত শত তরুণ-যুবকের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হাতিয়ে নেয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। অনেকে বেচাকেনার শিকার হয়। কেউবা আবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। নিজের পাশাপাশি পরিবারকেও ঠেলে দেয় প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে। সাধারণ মানুষ প্রতারকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। মিথ্যা আশ্বাস, প্রলোভন, বৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটছে। মিথ্যা আশ্বাসে অসংখ্য মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। তাই মানবপাঁচারের মতো একটি ভয়াবহ অপরাধ রোধে সরকারেরপদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উচিত সম্ভাবনাময় অভিবাসীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা এবং তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও দেশ ত্যাগের আগে অভিবাসীদের আরও উন্নত ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। দোষীদের আইনের আওতায় আনা। আর সেই কাজটি করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকেই। পাশাপাশি মানব পাঁচার বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। মানব পাঁচার একটি জঘন্য অপরাধ। এ ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুসংগঠিত মানব পাঁচার ও চোরাচালানের নেটওয়ার্কগুলোকে অকার্যকর করে এই অপরাধকে দমন করতে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে মানবপাঁচার দ্রুত নির্মূল হোক।