দেশে শিল্পপণ্য উৎপাদনে বিপর্যয় সৃষ্টির বিষয়টি উদ্বেগজনক। দেশের শিল্প খাত কঠিন সময় অতিক্রম করলেও বর্তমানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক কারণে উদ্যোক্তাদের এখন গলদঘর্ম অবস্থা। আমরা সবাই জানি যে বিনিয়োগ যেকোনো দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নতির একটি বড় বিষয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ আসে রপ্তানি খাত থেকে। বিশেষ করে এ খাতে মোট আয়ের ৬০ শতাংশের ওপরে আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে যায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। কিন্তু করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার বাতাস লেগেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে। আমদানিকারক দেশগুলো ইতোমধ্যে মন্দার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। স্টোরগুলো খালি হচ্ছে না। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন অর্ডার নেই। এখন নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা শিল্পোদ্যোক্তাদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। এভাবে যদি চলতে থাকলে উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে আমদানি-রপ্তানি কমার প্রভাবে বদলে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমনের চিত্র। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আরো বাধাগ্রস্ত হয়, এতে অর্থনৈতিক সংকট আরো গভীর হবে। আমাদের যে শিল্প, বিশেষ করে প্রডাক্টিভ মানে উৎপাদনশীল খাতে আমাদের যে বিনিয়োগ সেটা দিন দিন বৃদ্ধি পাঁচ্ছে না। সার্ভিস সেক্টরে হাসপাতাল এবং ভ্রমণ ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে বাড়ছে। সেটার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি আমাদের প্রয়োজন হলো উৎপাদনশীল খাতে। এ খাতেও বিভিন্ন সংকটের কারণে কাজ হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। সর্বশেষ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে শিল্প খাতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার। অথচ তিন মাস আগেও এসব খাতে একই পেশায় নিয়োজিত ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির সংকটগুলো তীব্র আকার ধারণ করার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এতে আশা করা যায়, কিছু শিল্প অন্তত ভালো থাকবে। এর বাইরে অন্যান্য শিল্পের বিষয়ে এখন টিকে থাকার নীতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে মন্দার আঘাত কম-এমন দেশের প্রতি নজর দিতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন উদ্যোক্তারা। উদ্ভূত সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকার শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে, এটিই প্রত্যাশা।