নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে দলের নেতাকর্মীরাই তালা মেরে পালিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, কিছুকিছু পত্রিকা লিখেছে বিএনপির অফিসে তালা। বিএনপির অফিসে তো প্রশাসন তালা মারে নাই। তারা নিজেরাই তালা মেরে পালিয়ে গেছে। একটা তালা খোলার মানুষও নাই তাদের। একটা রাজনৈতিক দলের সেই সাহস নেই যে, তালা ভেঙে অফিসে গিয়ে বসবে। তারা কীভাবে রাজনীতি করবে। আমার মনে আছে, বিএনপি আমাদের অফিসে তালা মেরেছিল। আমরা তালা ভেঙে অফিসে গিয়ে বসেছি। বৃহস্পতিবার তথ্য ভবনে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নতুন অফিস উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, কর্মসূচির নামে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বিএনপি। প্রতিদিন গাড়ি পোড়াচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে লেখেন। তারা ভেবেছিল জ্বালাও পোড়াও করে নির্বাচন পেছাবে। বিএনপিকে কেউ কেউ বাতাস দিচ্ছে। যারা বাতাস দিয়েছে তাদের বাতাস ফুরিয়ে গেছে। তারা ভেবেছিল এগুলো করে নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেবে। কিন্তু নির্বাচন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে জনগণের অংশগ্রহণে হবে। হাছান মাহমুদ আরও বলেন, বিএনপির জোট থেকে এখন সবাই পালিয়ে যাচ্ছে। তারা নাকি জোটসঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। অথচ তাদের জোট থেকে তিনটা নিবন্ধিত দলসহ ছয়টি দল বেরিয়ে গেছে। এরা সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাও দিয়েছে। যেভাবে তৃণমূল বিএনপি এগিয়ে যাচ্ছে। আমার শঙ্কা হয়, বিএনপি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের ভরসার স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে সাংবাদিকবান্ধব তা প্রমাণিত। তিনিই প্রথম কল্যাণ ট্রাস্টের ধারণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন সবাই যেন দলমত নির্বিশেষে তার প্রাপ্য অনুযায়ী সহায়তা পায়। তাই যারা প্রেস ক্লাবের সামনে বসে সরকারের পতন চায়, আমরা তাদেরও সহায়তা দিচ্ছি। তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আন্দোলনের নামে গুহা থেকে বের হয়ে অনলাইনে চেহারা দেখিয়ে বিএনপির কর্মসূচির নামে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো, আগুনসন্ত্রাস চালানো, মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপের কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। এগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে না। আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দয়া করে আপনারা কলম ধরুন, কথা বলুন। সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের নামে ৩২ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। একজন সাংবাদিককে টানাহেঁচড়া করে মাটিতে ফেলে তাকে পেটানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জনের বেশি হচ্ছে বিএনপি বিটের সাংবাদিক। তাদের তারা চেনে তারপরও মেরেছে। বাংলাদেশে একদিনে এত সাংবাদিককে আহত করা আগে কখনো ঘটেনি। হাছান মাহমুদ বলেন, শুধু তাই নয়, তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন খুলনার হুমায়ুন কবীর বালু, মানিক সাহা, যশোরের সাইফুল ইসলাম মুকুল, শামসুর রহমানসহ ৭ বছরে ১৪ জন সাংবাদিককে খুলনা, যশোর এলাকাতেই হত্যা করেছে। সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি-জামায়াতের কেন জানি ক্ষোভ এবং তারা যখনই ক্ষমতায় ছিল সাংবাদিকদের হত্যা করেছে। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি বলেছিল, জোটের সমর্থন নিয়ে তারা দুর্বার আন্দোলনের চেষ্টা করছে, নির্বাচনকে ঠেকিয়ে দেবে। অথচ যারা তাদের বাতাস দিয়েছিল তাদেরও বাতাস ফুরিয়ে গেছে আর গতকালই তাদের ১২ দলীয় জোট থেকে তিনটি নিবন্ধিত দলসহ ছয়টি দল বের হয়ে গেছে। জোটের শরিকরাও পালিয়ে যাচ্ছে আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমার শঙ্কা, যেভাবে তৃণমূল বিএনপি আগাচ্ছে তাতে বিএনপি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। বিএনপি অফিস তালাবদ্ধ প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, এই তালা প্রশাসন দেয়নি, ওরাই তালা মেরে চলে গেছে। একটা তালা খোলার মানুষ নেই তাদের। একটা তালা খুলে ওখানে বসার সাহসটাও তারা হারিয়ে ফেলেছে, তারা কীভাবে রাজনীতি করে! আর বিএনপি আমাদের অফিসে তালা দিয়েছিল, আমি ছিলাম সেখানে, আমরা তালা ভেঙে ঢুকেছি। যথাসময়ে উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, আসুন সবাই মিলে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই অগ্নিসন্ত্রাস-নৈরাজ্যের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করি, আমাদের সরকার এই আগুনসন্ত্রাসী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দেশবিরোধী অপশক্তিকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সাংবাদিকবান্ধব, এই ট্রাস্ট তার অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটি ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে এককালীন সহায়তা হিসেবে ১০ হাজারের বেশি সাংবাদিককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এজন্য ১০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। মন্ত্রী ও অতিথিরা এদিন ১৮৬ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের হাতে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এর আগে তথ্য ভবন কমপ্লেক্সে পুরাতন ডিএফপি ভবনের দোতলায় সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের নতুন অফিস উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রধান তথ্য অফিসার মো. শাহেনুর মিয়া, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. নিজামূল কবীর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, ট্রাস্টের পরিচালক মিয়া মুহম্মদ মনিরুল কবীর প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।