বিশ্বে মানবসভ্যতাকে ধ্বংস করতে ক্রমাগত মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স। চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমাগতভাবে অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপারেশনের ক্ষত শুকানো ও রোগ সারাতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। ফলে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে জীবনের আশঙ্কা ও চিকিৎসার ব্যয়। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাকটেরিয়াজনিত (অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট) সংক্রামক রোগের হার বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই বেড়ে চলেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অসংগত ব্যবহার। বর্তমানে মানুষের কল্যাণে আশীর্বাদ হয়ে উদ্ভাবিত অ্যান্টিবায়োটিক যেন অভিশাপ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। শরীরে ক্ষতিকর জীবাণুর সঙ্গে লড়াইয়ের ওষুধ অ্যান্টিবায়োটিক। এটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। সে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাওয়া হলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে আগে অনেক ওষুধ শরীরে কার্যকর ছিল, বর্তমানে সেগুলো আর কাজ করছে না। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট নিউমোনিয়া’ র হার বেড়ে গেছে এবং এসব রোগীর প্রায় ১৮ শতাংশের চিকিৎসার জন্য প্রায় কোনো অ্যান্টিবায়োটিকই কার্যকর নয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ব্যাপক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। আগে অনেক ওষুধ শরীরে কার্যকর ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো আর কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে চিকিৎসা ব্যয়ও বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এমনকি কার্যকর নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন সময়সাপেক্ষ বিধায় এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে। বিশ্বে প্রতি বছর ৫০ লাখ মানুষ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর কারণে মারা যায়। এর মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু। মৃত্যুর বড় অংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে। এই অবস্থায় এক বা একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী রোগজীবাণুর আবির্ভাব ঘটতে পারে। যার আক্রমণে মানবসভ্যতা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে পারে। তাই এই মহাদুর্যোগ রোধে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করে মানুষ, মাছ ও পশু-পাখিতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সার্ভেইলেন্স কার্যকরভাবে চালু করতে হবে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ বিক্রেতাদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে সব মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নিয়ম যথাযথভাবে পালন করা না হলে মানুষের শরীরে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং সংশ্লিষ্ট রোগের জীবাণু নিজেদের নতুন একটি স্ট্রেইনে রূপান্তর করে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নিষ্ফল করে দেয়। চিকিৎসক ছাড়া অন্য কারও পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু করলে পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে হবে। মাঝপথে বন্ধ করা যাবে না। উপসর্গ উপশম হয়ে এলেও যত দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যেতে হবে। আগামীর কথা চিন্তা করে সবাইকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।