ব্যাংক খাত ও রিজার্ভসহ সব ধরনের আর্থিক খাত খেলাপি ঋণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ যেমন বাড়ছে, তেমনি এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপির ৮৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের সিংহভাগই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ। ওইসব ঋণ আদায় না হওয়ায় রীতিমতো ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে পুরো ব্যাংক খাত। মন্দ ঋণ হিসাবে আটকে আছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রভিশন হিসাবে আটকে রয়েছে সমপরিমাণ অর্থ। এ দুটি মিলে মোট ২ লাখ ৭২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। ঋণ বাবদ আটকে থাকা অর্থ আমানতকারীদের। এর বিপরীতে আমানতকারীদের নিয়মিত মুনাফা দিতে হচ্ছে। প্রভিশন বাবদ আটকে থাকা অর্থ ব্যাংকের মুনাফা থেকে জোগান দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এগুলো সবই মন্দ ঋণ হিসাবে শ্রেণিকৃত ছিল। আদায় করতে না পারায় এগুলো মন্দের তালিকায় এসেছে। পরে সেগুলো অবলোপন করা হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতেও শতভাগ প্রভিশন রয়েছে। ফলে এ খাতেও আটকে রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। চলমান মন্দ ঋণ ও অবলোপন মিলে আটকে রয়েছে ৪ লাখ ৩ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ব্যাংক খাতে আদায় অযোগ্য ঋণ ছিল ৮১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে তা সামান্য কমলেও ২০২১ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ হাজার ৬০ কোটি টাকায়। ২০২২ সালে মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রথমবারের মতো লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে। ওই বছরে মন্দ ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকায়। জানা যায়, মন্দ ঋণ সরকারি ব্যাংকগুলোতেই সবচেয়ে বেশি। চারটি সরকারি ব্যাংকে এ ঋণ বেড়ে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১২৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে একটি সরকারি ব্যাংকে ১৬ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, অপর একটি সরকারি ব্যাংকে ১৫ হাজার ৭২ কোটি টাকা এবং আরেকটি সরকারি ব্যাংকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৪১৩ কোটি টাকায়। বিদেশি ব্যাংকে মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকায়। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকে মন্দ ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৬ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বস্তুত ডলার সংকট, খেলাপি ঋণ, বিদেশে অর্থ পাঁচার, আমদানি-রপ্তানিতে অস্থিরতা-এসব সমস্যা একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। এসব সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। কাজেই দুর্নীতি রোধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঋণের আবেদনকারীদের যোগসাজশেও খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়। কাজেই ব্যাংক কর্মকর্তারা যাতে কোনোভাবেই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারেন- তা নিশ্চিত করতে হবে।