অনলাইনে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে জুয়ার ফাঁদ পাতা হয়। লোভ দেখানো হয় এক দিনেই লাখপতি হওয়ার! এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন দেশের উঠতি বয়সি তরুণ, বেকার যুবকেরা। এভাবেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। প্রযুক্তির আশীর্বাদ যখন যোগাযোগসহ অনেক কিছুই হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে তখন এর অপব্যবহার একই সঙ্গে জীবনে সর্বনাশের গাঢ় ছায়াও ফেলেছে। জুয়ার ফাঁদ পাতা ভুবনে বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিশেষ করে তরুণ-যুবসমাজ যেভাবে জড়িয়ে পড়েছে, তা অশনিসংকেত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন চটকার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ বাড়ছে অনলাইন জুয়ার প্রতি। গ্রামের শ্রমজীবী লোকজন যারা অনলাইন সম্পর্কে খুব ভালো বুঝে না তারাও মোবাইলে লুডু দিয়ে জুয়া খেলা শুরু করেছে। অনেকে এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে জুয়া খেলে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত।
তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তীতে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। জুয়ার কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য জীবনে কলহ। খেলার টাকা যোগার করতে এলাকায় মাদকসহ বাড়ছে অপরাধ। এতে উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকদের। পৌর এলাকা থেকে শুরু করে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় এই জুয়া বিস্তার লাভ করছে। স্মার্টফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপস ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। এসব অ্যাপসের বেশির ভাগই পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশ জুড়ে রয়েছে এদের বিশাল এজেন্ট। এসব এজেন্টের কাজ হলো সাইটে কাজের জন্য গ্রাহক জোগাড় করা। জুয়া খেলার জন্য প্রতি গ্রাহক যে পরিমাণ টাকা প্রদান করেন এবং লাভের ওপর নির্দিষ্ট অংশ এজেন্টরা কমিশন হিসেবে পেয়ে থাকেন। যখন এমন জুয়ার অ্যাপের কথা একটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন এজেন্টকে আর তেমন কাজ করতে হয় না। কারণ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে জুয়া খেলার অ্যাপটির কথা। বন্ধুর মাধ্যমে বন্ধু জানতে পারে অ্যাকাউন্ট খুললেই লাখ লাখ টাকা ইনকাম করার সুযোগ।
দেশের তরুণ যুবকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এভাবে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে। এছাড়াও অনলাইন জুয়ার কারণে বাচ্চাদের পড়ালেখায় মনোযোগ নেই। তাদের ভবিষ্যৎ অনলাইন জুয়া নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সব বাজি, জুয়া, বেটিং সাইট বন্ধ করা এবং বিভিন্নভাবে প্রচারণার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করা। এই সর্বনাশা অনলাইন জুয়ার নেশার বিরুদ্ধে বিপন্ন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো উপায়ে তরুণ-কিশোরদের রক্ষা করতে হবে মোবাইল অ্যাপসে সংক্রমিত এসব জুয়ার আগ্রাসন থেকে।