মাদ্রাসা শিক্ষা ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে। প্রতিবছর এসএসসি, দাখিল ও সমমানের ফলাফলে দাখিল পরিক্ষার্থীদের ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয়, পাশের হার ও বেশি থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এর চিত্র বিপরীতমুখী। পরিক্ষার্থী সংখ্যা, পাশের হার এবং জিপিএ-৫ এর হার নিম্মমুখী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে গত ৫ বছরে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। এমনকি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সেরা মাদ্রাসাগুলো থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও তাদের কাক্সিক্ষত ফলাফল পায়নি। এসবকিছুর ফলে অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি ক্রমাগত অনাগ্রহী হচ্ছে। প্রতিবছর ই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেখানে শিক্ষার্থী কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেখানে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল এই ৫ বছরে দাখিল পরিক্ষায় শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৯০ হাজার। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও আগ্রহ হারাচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এমতাবস্থা চলমান থাকলে কিছুদিন পর মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে।
আমরা বিগত কিছু বছর ধরে দেখতে পাঁচ্ছি মাদ্রাসা শিক্ষাক্রমে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে। ইসলামি স্বর্ণযুগের মাদ্রাসার শিক্ষার কার্যক্রমের সঙ্গে বিস্তর ফারাক যে আছে তা কিন্তু নয়। তবে যে বইগুলো ছাত্রদের হাতে দেয়া হয় এ বইগুলো সম্পর্কে ভালো জ্ঞান/দক্ষতা মাদ্রাসার শিক্ষকদের কতটা আছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। অধিকাংশ আলিয়া মাদ্রাসায় না আছে আরবি শিক্ষাক্রমের জন্য যোগ্য শিক্ষক না জেনারেল শিক্ষার জন্য যোগ্য শিক্ষক। যেখানে একটি আধুনিক, মানবিক ও দক্ষ সমাজগঠন এখন আমাদের লক্ষ্য। সে কারণে অবশ্যই নতুন কারিকুলাম একটা বড় উদ্যোগ। তবে যেকোনো শিক্ষা ও পেশার গুণগত মান্নোয়নের জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
মাদ্রাসা শিক্ষায় মেধাবীদের ধরে রাখতে যোগ্য শিক্ষক নিয়গ ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আকর্ষণীয় কার্যকর পন্থায় পাঠদানের পদ্ধতি জানা থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার প্রতি আকৃষ্ট ও আগ্রহী হয়। দুঃখের বিষয় হলো, ক্ষেত্রবিশেষে অনেক শিক্ষকের দায়িত্বহীন ভূমিকার কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিরূপ মনোভাবের শিকার হন, শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমতাবস্থায় কওমি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষকসুলভ মনমানসিকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষিত করা সময়ের দাবি। কিন্তু শুধু কারিকুলামে পরিবর্তন এনেই মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করা যাবে না। সেজন্যে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহলের ভূমিকা রাখা অপরিহার্য। নিবিড় তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষকের মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।