দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রস্ততি প্রায় শেষ করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন প্রস্ততি নিচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তফসিল বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে নাটোর নওগাঁ ও রাজশাহীতে একের-পর এক গুপ্ত হামলার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এসব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন নি। সর্বশেষ গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় নাটোর শহরে এনএস সরকারি কলেজ মসজিদের সামনে থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। একটি সাদা রংয়ের মাইক্রো-বাসে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় এসে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যায়। এ নিয়ে নাটোরে এক মাসে ১১ টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটলো। হামলার শিকার প্রায় সবাই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী।
শুধু নাটোর নয়, পাশের জেলা নওগাঁ ও রাজশাহীতেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ওপর একের পর এক গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটছে। গত দু’ মাসে নওগাঁয় ছ’ টি এবং রাজশাহীতে তিনটি ঘটনা ঘটেছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে গত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত হামলার এসব ঘটনার ১১ টি হামলা হয়েছে। নওগাঁয় একটি হামলায় দু’ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও নাটোর ও রাজশাহীতে কোনো গ্রেপ্তার নেই। নওগাঁর তিন উপজেলায় ছ’ টি গুপ্ত হামলায় বিএনপির এক নেতা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের চারজন নেতা কর্মী। সবচেয়ে বেশি গুপ্ত হামলা হয়েছে রানী নগর উপজেলায়- তিনটি। রাজশাহীতে গত দেড় মাসে গুপ্ত হামলা হয়েছে তিনটি। এর মধ্যে দু’ জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। তিনটি ঘটনায় মুখোশ-ধারীরা মাইক্রো-বাসে এসে হামলা করে পালিয়ে যায়। দু’ চিকিৎসক খুনের ঘটনায় করা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের সাথে তেমন কোনো শত্রুতা নেই কারো। শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে তাদের ভয় দেখাতে হামলাগুলো করা হয়েছে। ঘটনা ঘটার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, তারা তদন্ত করছেন। সময় কেটে যাচ্ছে সময়ের নিয়মে কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এজন্য এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিএনপি সরকারের আমলে এলাকাগুলোয় বাম চিন্তাধারার সংগঠনগুলোর প্রভাব ছিল। যে প্রভাব নিশ্চিহ্ন করতে তারা মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠী বাংলা ভাইকে সহযোগিতা করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গী গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে পারলেও নিজেদের দলীয় ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি। দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের হলেও নির্বাচনের আগে যে ভাবে গুপ্ত হত্যা বেড়েছে তা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই জনগণের নিরাপত্তার জন্য ও সরকারের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ততোই মঙ্গল।