ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ সেবন এর প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রায় ৩৯ শতাংশ মানুষ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওষুধ সেবন করছে। আবার অনেকে ফার্মেসি খোলার অনুমতি নিয়ে বিক্রেতারা ডাক্তার সেজে বসেন। স্পর্শকাতর, ঝুঁকিপূর্ণ নানা ওষুধ তাঁরা বিনা ব্যবস্থাপত্রে তুলে দেন মানুষের হাতে। অনেক ওষুধেরই যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, সে বিষয়েও অনেক ওষুধ বিক্রেতার জ্ঞান নেই। নিম্নমানের, এমনকি ভেজাল ওষুধ গছিয়ে দিতেও তাঁদের বাধে না। ফলে রোগমুক্তির বদলে অনেক ক্ষেত্রেই জটিলতা বাড়ছে। এমনকি ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা নেই। বিশেষ করে আমাদের দেশে নিম্ন আয়ের মানুষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসি থেকে এখন অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করে। এসকল নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার সুযোগে ফার্মেসিভিত্তিক ভয়ংকর ডাক্তারির বেপরোয়া প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। বর্তমানে অনেক কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিককে সংক্রমণ চিকিৎসায় অকার্যকররূপে পাওয়া যাচ্ছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি ভয়াবহ হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি থেকে ব্যবহার পর্যন্ত জড়িত সবার সচেতন থাকা জরুরি। যদি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বন্ধ করা না যায় দেশ এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিপণনেও নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। দেশে অনুমতিপ্রাপ্ত ফার্মেসির তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলে না। নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি ও বাজারজাতকারীরাও শাস্তি পায় না। বরং ওষুধের দোকানদার রোগী এলেই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। তাই এটি বন্ধ করতে হবে।
এ কর্মকাণ্ডে পুরো সমাজকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই কোনোভাবেই অপ্রয়োজনে চিকিৎসকরা যেন অ্যান্টিবায়োটিক না দেন, এটি নিশ্চিত করতে হবে এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া রোগীরা ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক না কিনেন সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ বিষয়ে বাজার নজরদারিতে ওষুধ প্রশাশনের বেশি কঠোর হওয়া উচিত। কেননা সবার জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন-এ প্রত্যাশা করছি। নয়তো দেশ এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে।