পর্যটনশিল্পকে উন্নত করে দেশের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা, সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের অভাবসহ আরও নানা কারণে এর কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না দেশের পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশ উদীয়মান শিল্পের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পর্যটন শিল্প। দেশের মোট জিডিপির শতকরা ৪.৪ শতাংশ আসে এই শিল্প থেকে। পর্যটনের মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, হস্তশিল্প, খেলাধুলা ও উৎসবসমূহ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকষর্ণীয়ভাবে তুলে ধরার মধ্যেই রয়েছে অফুরন্ত সুযোগ ও সম্ভাবনা। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে পর্যটন শিল্পের ভূমিকা উজ্জ্বল। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের দেশকে রূপের রাণী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান, পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ বিছানো নয়নাভিরাম সিলেট, স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথরম জলের মিতালিতে বয়ে যাওয়া জাফলং ও বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝরনা, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, মিনি কক্সবাজার, হাকালুকি এবং কানাইঘাটের লোভাছড়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-আচার, উচ্চ সবুজ বনভূমি ঘেরা পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইত্যাদি। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সম্ভাবনা বিদ্যমান। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে এই বিপুল সংখ্যার ৭৩ শতাংশই আবার ভ্রমণ করবে এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এই বিশাল বাজার ধরতে পারে তবে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক বড় একটি ইস্যু। অস্থিতিশীলতা, চুরি, ছিনতাই, হত্যা, রাহাজানি, সহিংসতা থেকে পর্যটকদের রক্ষা করতে হবে। পর্যটকদের দিতে হবে নির্বিঘ্নে চলাফেরার নিশ্চয়তা। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তবেই না তারা এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট হবে। প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই এই শিল্পকে আরও বিকশিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের আরও নজরদারিতা বাড়াতে হবে।