দেশে সেভাবে শীত আসার আগেই শীতকালীন বিভিন্ন রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জানা যায়, নভেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহে এ দুটি রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৬৪১ জন ডায়রিয়া এবং ১২ হাজার ৩৬২ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) উপাত্ত থেকে জানা যায়, আক্রান্তদের বেশির ভাগই ছিল শিশু ও বয়স্ক রোগী। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়ায় দেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ২৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। অপুষ্টি, অপরিণত শিশুর জন্ম, বায়ুদূষণ, বিশেষ করে ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময়ে শনাক্ত করতে না পারাই মূলত নিউমোনিয়ায় এত বেশি মৃত্যুর কারণ। এমআইএসের তথ্য মতে, চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭৮ রোগী। গত অক্টোবরে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৮ হাজার ৮৫৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর চলতি বছর ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় তিন লাখ ৮১ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বিভাগেই রোগী ভর্তি হয় ৭৬ হাজার ১২৮ জন, যা দেশের মোট রোগীর ২০ শতাংশ। ডায়রিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। পানীয়জল বিশুদ্ধ না হলে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। আবার মানুষ পান করার জন্য ফোটানো বা বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করলেও থালাবাসন ধোয়া, খাদ্যবস্তু, ফলমূল বা সালাদজাতীয় খাবারে যে পানি ব্যবহার করে তা প্রায়শ বিশুদ্ধ হয় না। এতেও জীবাণু ছড়ায়। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়েও অনেক অভিযোগ আছে। অনেকেরই অভিযোগ, পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকে। জলাবদ্ধতা, নগরীর অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবেশগত সুরক্ষার অভাব ও সুপেয় পানি সরবরাহ পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ থাকা, ময়লাযুক্ত পানি সরবরাহ, ভূগর্ভস্থ পানির পাইপলাইন ফেটে গিয়ে মাটি ও ড্রেনের দূষিত পানি মেশার অভিযোগও আছে। দেশের অনেক হাসপাতালে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ রোগী ভর্তি করাতে হচ্ছে। সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই এ সময়ে অস্থায়ীভাবে হলেও হাসপাতালগুলোর ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত আক্রান্ত এলাকায় প্রয়োজনে ‘ফিল্ড হসপিটাল’ পরিচালনা করতে হবে। স্যালাইন ও ওষুধের সরবরাহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং সম্ভাব্য সব উপায়ে বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।