দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিতে দুর্দশায় শহরের নিম্ন আয়ের মানুষ। এমন কর্মসূচি চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এরমধ্যেই এমন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে বেচাকেনা, আয় নেই ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের। দিন আনে দিন খায় কিংবা স্বল্প আয়ে মাস চলা মানুষগুলোর যেন আর চলছে না; সে কথা তারা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। সামাজিকতা রক্ষায় অনেকটা লুকোচুরি করে চলতে হচ্ছে। ব্যয় কমাতে কেউ-বা তাদের সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্রামের বাড়িতে; কেউ-বা পরিবারের একাধিক সদস্যকে রোজগারের কাজে লাগিয়েছেন। কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মনিটরিং সেলের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে জীবনধারণের অত্যাবশ্যকীয় সব পণ্যের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাই বেশি চাপে পড়েন। আর হঠাৎ কোনো ধরনের পরিবর্তনে মানসিক অসংগতি দেখা দেয় তাদের মধ্যেই। এর প্রভাব পড়ে জীবনযাপনের ওপর।’ অবরোধ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তার ভিখারিরা পর্যন্ত। তাদের ঝুলিতে পয়সা তেমন পড়ছে না। শুধু ঢাকা নগরীই নয়, অস্থিরতা ও নৃশংস রাজনীতির শিকার সারা দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের জীবন আর চলে না। আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। না খেয়ে বা আধাপেটে দিন কাটছে। জীবনের চাকা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে অনেকের। নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। হরতালে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গেছে। একদিকে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষক বা উৎপাদক তার পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অন্যদিকে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে পণ্যের সরবরাহ না থাকায় উচ্চমূল্যে কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাকে। ব্যবসা কমে যাওয়ায় ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে না পারায় চাকরি হারাতে হয়েছে অনেক শিল্প কারখানার কর্মীকে। হরতাল-অবরোধের কারণে দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। বেশি দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাংস ও মাছ কম খাচ্ছেন। এখন মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুষ্টিকর খাবার কমিয়ে দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের পুষ্টিঘাটতির কারণ হবে। এ সমস্যার সমাধান করতে পারেন একমাত্র রাজনীতিবিদরাই। বিশেষ করে দেশের প্রধান দু’দলকেই সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে। তা না হলে দেশের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।