সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ছয় হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৭১৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুই হাজার ৯৭৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৯১ জন। ২০২২ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৯৭৩টি। এতে নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৯১ জন ও আহত হয়েছেন দুই হাজার ১৫৪ জন। নিহতের মধ্যে ৭৬ দশমিক ৪১ শতাংশ ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। অন্যদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে সারাদেশে দুই হাজার তিনটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই হাজার ৯৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন এক হাজার ২৮৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ অর্থাৎ ৩৪৭ জন ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী এবং ৭৩ দশমিক ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫৩৩ জন ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী। এ সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সারাদেশে ৭৬৪ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। যা মোট মৃত্যুর ৩৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ৯২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট মৃত্যুর ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এতবেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া চালনা, মাত্রাতিরিক্ত গতি, আইন না মানা এবং চালকদের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকা। রাজধানী ঢাকায় এ প্রবণতা বেশি দৃশ্যমান। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালকরা ঘনঘন লেন পরিবর্তন করেন, এমনকি কোনো কোনো সময় বাইক ফুটপাতের ওপর উঠিয়ে দেন। অর্থাৎ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকদের বেপরোয়াপনা। এ কারণে মোটরসাইকেলচালকদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। সবচেয়ে যা জরুরি তা হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনিটরিং। চালক বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালালেই তাকে থামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর একটি বড় কারণ হেলমেট না থাকা কিংবা নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করা। তাই শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও চালক ও আরোহীর ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মোটরসাইকেল চালানোর জন্য সড়কে আলাদা কোনো লেন নেই। ফলে চালককে বিশৃঙ্খলভাবে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায়। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে সন্দেহ নেই। তাই মোটরসাইকেলচালকদের মোটিভেশনেরও দরকার আছে। আর তা হতে পরে পরিবারের ভেতরেই। পরিবারের অন্য সদস্যরা যদি মোটরসাইকেল চালক সদস্যকে সাবধানে চালানোর দীক্ষা দিতে পারেন, তাহলে তা দুর্ঘটনা রোধে বড় সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি।