সমাজ বা দেশ গঠনে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যা তাদের জীবন ও কার্যপ্রণালীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বর্তমান সময়ে নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেসব মহিলারা অশিক্ষিত তারা শুধু পরিবারেরই বোঝা নয়, জাতির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বলে বিবেচিত। দেশ ও দশের উন্নয়নে নারীর অপার সম্ভাবনা ক্ষমতায়নে নারী শিক্ষার ভূমিকাকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। একটা সমাজ সংশোধনে শিক্ষিত নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। এরা যে দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করতে পারবে, এটা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের পক্ষেও সম্ভবপর হয়না। যুগ যুগ ধরে নারী ছিল পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। এখন নারীজাতি স্বাবলম্বী। একসময় নারীর পরিচয় ছিল কন্যা, ভগ্নি, মাতা ও পত্নীরূপে। আর সর্বত্রই নারীরা ছিল অসহায়। কিন্তু নারীরা সেই দুর্দিনের অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়ে আজ আলোকিত জগতের উদার প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছেছে। মানবজাতির মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটাতে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা মানুষকে আলোর পথ দেখায়। একটি দেশ, একটি জাতির উন্নয়নের জন্য সবার আগে চাই শিক্ষা। আর একটি জাতিকে শিক্ষিত হতে হলে সবার আগে চাই শিক্ষিত মা। একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। কিন্তু এত কিছুর পরও দেশে এখনো নারীশিক্ষার উপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়না, শহরাঞ্চলে নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসার হলেও গ্রামাঞ্চলে তা এখনো বিকাশ হয়নি। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও আমাদের দেশে শিক্ষিত নারীর সংখ্যা মাত্র ২৬ শতাংশ। নারীশিক্ষার মূল প্রতিবন্ধকতাই হচ্ছে কুসংস্কার। ব্যাপক সংখ্যক নারী এখনও কুসংস্কার ও অজ্ঞতার অন্ধকার কাটিয়ে এগিয়ে আসতে পারেনি। আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিভাবকই তাদের কন্যাসন্তানকে শিক্ষাঙ্গনে পাঠাতে ভয় পান। এই ভয়ের সঙ্গে যুক্ত আছে আর্থিক অনটন। তাছাড়া বিপুল সংখ্যক নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জগতে নিয়ে আসার জন্যে যে বিশাল উদ্যোগ, আয়োজন ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো দরকার তা আমাদের নেই। এ পরিস্থিতিতে সব শ্রেণির মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না হলে নারীশিক্ষার অগ্রগতি কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তাই নারী শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়ে জনসাধারণের মধ্যে প্রচারণা চালাতে হবে। নারীকে শিক্ষিত করে তুললে কি ধরণের লাভ হবে আর না করলে কি ক্ষতি হবে তা সবাইকে বুঝাতে হবে। নারী শিক্ষার প্রসারে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের পশ্চাদপদতার অন্যতম কারণ হলো ধর্মীয় গোঁড়ামি। এই গোঁড়ামি দূর করার জন্য ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাখাতে সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ অবকাঠামো নির্মাণের গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। নারী সমাজকে উন্নয়নের তথা ক্ষমতায়নের মূল স্রােতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে কোনভাবেই সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়। নারীর অসীম শক্তি সম্ভাবনা, বিকাশের পথ সহজ হবে তখনই যখন উন্নয়নের মূলধারায় তার প্রাপ্য অধিকারটুকু বাস্তবায়িত হবে।