থামছেইনা ডেঙ্গু জ্বরের মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার দিন থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এই রোগে মারা গেলেন ১ হাজার ৬১৫ জন মানুষ। ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৪৩ জন। চলতি বছর দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ২ লাখ ৩ হাজার ৩২২ জন। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮৬৮ জন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬ জন শনাক্ত এবং প্রাণহানি ৩৪২ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগী ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন এবং মারা গেছেন ৩৯৬ জন। অক্টোবরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭৬৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩৫৯ জন। নভেম্বরের ২৭ দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯১২ জন এবং মারা গেছেন ২৫৮ জন। এত মানুষের মৃত্যুর পরও কেন থামানো যাচ্ছেনা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা? এর পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। দেখা যাচ্ছে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। এর কারণ হলো সচেতনতার অভাব। শহরাঞ্চলে ডেঙ্গু নিয়ে প্রচার প্রচারণা হলেও গ্রামাঞ্চলে খুব একটা হয়নি। এডিস মশার ২৬ প্রজাতির মধ্যে ইজিপ্টাই ও অ্যালবোপিকটাস ডেঙ্গু ছড়ায়। ইজিপ্টাইয়ের প্রাধান্য নগরে, গ্রামে অ্যালবোপিকটাসের। গ্রাম্য এরিয়ায় ধান গাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর এমনকি কচু গাছের পাতায়ও এডিস অ্যালবোপিকটাসের লার্ভার সৃষ্টি হয়। আবার গ্রামে এখন শহরের মতো কংক্রিটের দালানকোঠা বেড়েছে। প্লাস্টিকের নানা তৈজসপত্রসহ শহরের মানুষের ব্যবহার্য অনেক জিনিস গ্রামে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি আছে অটোরিকশার টায়ার। এসব কারণে সহরের মতো গ্রামেও ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি। তাই এই ডেঙ্গুর মৃত্যুর হার কমাতে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। পৌরসভা কর্তৃক ডেঙ্গু প্রতিরোধমূলক অভিযান চালাতে হবে। আর তাহলেই ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।