একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের অবস্থান ছিল চতুর্থ। বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হলো ‘চামড়াশিল্প’। চামড়া দিয়ে বিভিন্ন পণ্য দ্রব্য তৈরি করা হয়। এসব পণ্য যেমন দেশের বাজারে বহুল প্রচলিত, তেমনি বিদেশে চামড়াজাত পণ্যের বেশ খ্যাতি রয়েছে। ব্যাগ, জুতা ও বিভিন্ন পরিধেয় সামগ্রী তৈরিতে চামড়ার কোনো বিকল্প নেই। চামড়ার তৈরি জিনিসপত্র বেশ চড়া দামেই বিক্রয় হয় দেশ-বিদেশে। বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাঁচামালের সহজলভ্যতা। আমাদের দেশে সারা বছরই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশু জবাই হয়। তাছাড়া মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহার সময় প্রচুর গরু, ছাগল প্রভৃতি পশু কোরবানি হয়। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়ার বার্ষিক চাহিদার প্রায় শতকরা ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ আসে এই কোরবানির পশু থেকে। ফলে বাংলাদেশে পশু চামড়ার পর্যাপ্ত উৎপাদন ও সরবরাহ রয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রতি বছর পর্যাপ্ত পরিমাণ চামড়ার যোগান থাকলেও চামড়া বিক্রয়কারীরা ন্যায্য মূল্য পান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, নামমাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রয় করতে হয়। এমনকি এক ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের কারসাজিতে দাম না থাকায় কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কুরবানিদাতাদের কাছে থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে রাজি হয় না, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ট্যানারি মালিকরা বেশি দামে চামড়া ক্রয় করতে নানা টালবাহানা করে থাকেন। ফলে আজ এই সম্ভাবনাময় শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সরকারের একান্ত দায়িত্ব। তাই সরকারকে এখনি কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত প্রতিবছর চামড়া নিয়ে যারা সমস্যা সৃষ্টি করে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ব্যবসায়ীরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করছেন কিনা এ বিষয়েও নজরদারি করতে হবে। সরকারী উদ্যোগে আমাদের চামড়ার গুণগত মান প্রদর্শন করতে হবে। একটি মহল এই শিল্পকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যেতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। অবৈধ পথে পাঁচারের মাধ্যমে চামড়া শিল্পের দেশীয় বাজার একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেটকে ভাঙতে হবে। দেশের শিল্প দেশেই রাখতে হবে। সর্বোপরি ব্যবসা এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে মানসম্পন্ন প্রক্রিয়াজাত চামড়া উৎপাদন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ, বিভিন্ন ধরনের সহায়ক পরিষেবা প্রদান এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে চামড়াশিল্পকে একটি সম্ভাব্য নির্ভরযোগ্য রপ্তানিমুখী ও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়।