সারা দেশে দিনে-রাতে তাপমাত্রা কমা-বাড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতি, গাছের ঝরা পাতা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া সবকিছুই জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। সঙ্গে বিভিন্ন রকম ফুল, ফল, সবজির সমাহার। বাজারে হরেক রকম মৌসুমি শাকসবজির সমাহার শীতকালের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। শীতকাল যেমন দু’হাত ভরে প্রকৃতিকে উপহার দেয়, তেমন প্রকৃতি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। দেখিয়ে যায় তার নিষ্ঠুর রূপ। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ হলেও বছরের শেষের দিকে এদেশে শীতের প্রকোপটা নেহাতই কম নয়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত হাড় কাঁপানো শীতে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং হ্রাস ঘটে। তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে তখনই শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। চলতি শীত অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য চলমান শৈত্যপ্রবাহ দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলেছে। শীত মৌসুম কেটে যাওয়ার আগে আছে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা। শীত মৌসুমে একদিকে বাড়তে থাকে শীতের কাঁপুনি, অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়ে সর্দি, কাশি, জ¦র, পেটের পীড়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ নানা সংক্রামক ব্যাধি। বর্ষা ও শীত এ দু’কালেই অসহায় মানুষরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগেন। যৎসামান্য সাহায্য তারা পায় তা দিয়ে কোনোভাবেই তাদের দিন চলে না। কষ্ট সহ্য করেই দিন পার করতে হয়। তাদের পক্ষে একদিকে শীতবস্ত্র ও লেপ-কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা যেমন দুরূহ, অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও তাদের কম। ফলে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে তারাই আক্রান্ত হয় বেশি। ফলে দরিদ্র মানুষের জীবনে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র লোকেরা শীতের সঙ্গে মোকাবিলা করতে খড়কুটো জ¦ালিয়ে রাত কাটায়। তাদের যদি পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র থাকত তাহলে এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে নিজেদের বাঁচানোর প্রচেষ্টা করত না। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে শুধু জানুয়ারি মাসেই রংপুরে শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে ২৭ জন দগ্ধ হয়ে মারা যান। দুই শীত মৌসুম ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আগুনে দগ্ধ হয়ে অন্তত ৪০ জন মারা যান। শীতে অভাবী মানুষের জন্য এখন জরুরি দরকার হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। কিন্তু গ্রামের এসব মানুষের অনেকের পক্ষে আলাদাভাবে শীতের কাপড় কেনা দুঃসাধ্য। শীতার্তদের তুলনায় শীতবস্ত্র বিতরণের সংখ্যাও খুব কম। অসহায় মানুষদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার এখনই। তাই আমাদের মানবিক হয়ে এসব হত-দরিদ্র মানুষদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। যেসব অসহায় মানুষ শীতে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের পাশে থাকাটাই মানবতা। সমাজের বিত্তবান যারা আছে তাদের ব্যক্তিগতভাবে কিছু শীতবস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা উচিত। সরকার থেকে এসব হত-দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে শীতবস্ত্র। প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীতার্তদের সাহায্য করা হয় বটে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। তাই এবার এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে সবাইকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।