আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা অনুযায়ী ৭১ জন সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন পেতে ব্যার্থ হয়েছেন। এতে আ.লীগের মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের মনোনয়নে ৩টিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা ও দাকোপ) আসনে পঞ্চানন বিশ্বাসের পরিবর্তে ননী গোপাল মন্ডল, খুলনা-৩ (মহানগর ও দৌলতপুর) আসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল ও খুলনা-৬ (পাইকগাছা ও কয়রা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর পরিবর্তে মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল। এদিকে এই ৩টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে চমক দেখা দিয়েছে খুলনা-৬. সংসদীয় আসন ১০৪। এখান থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আ.লীগ নেতা মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। এর আগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হেভিওয়েট নেতাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন এই তরুণ নেতা। তিনি ছিলেন খুলনা জেলার বয়সে সর্বকনিষ্ঠ এমপি। কিন্তু এক মেয়াদেই মনোনয়ন দৌঁড়ে হেরে গেলেন তিনি। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। উপকূলীয় বেড়িবাঁধে কার্যকর বাঁধ নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রকাশ্যে জনরোষে পড়েছিলেন তিনি। এছাড়া কয়রা উপজেলা আ.লীগের কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে ‘দলটার আর বারোটা বাজাবেন না' বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন কয়রা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি জিএম মহসিন রেজা। নিজস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দুটি উপজেলার বহু কাজ বাগিয়ে নেয়া, দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে গুটিকয়েক বিতর্কিত লোকজনকে সুবিধা দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির কারণেই তার এমন পরিণতি বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। তারা আরো জানান, মনোনয়নের তালিকা থেকে মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর নাম বাদ পড়ায় বিতর্কিত লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে। এতে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আ.লীগের স্থানীয় কোন্দলও তাঁকে কোণঠাসা করে রাখে। ফলে প্রতিটি দুর্যোগে এলাকায় থেকে, বহু উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেও শেষ হাসি হাসতে পারেননি তিনি। এই এমপির বিরুদ্ধে সর্বশেষে ঠিকাদারী করার অভিযোগ করা হয়। অপর দিকে এবারও এ আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। খুলনা-৬ আসনে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানসহ ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বৈধ ও জাপা, স্বতন্ত্রসহ ৭ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর রোববার সকালে খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার খন্দকার ইয়াসিন আরেফীন এর সম্মেলনে কক্ষে ১২ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্টরা সরকার দলীয় প্রার্থীসহ ৫ জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ ঘোষণা করে অপর ৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। বৈধ মনোনয়ন প্রাপ্তরা হলেন, আ.লীগ মনোনিত মো. রশীদুজ্জামান, বিএনএম মনোনিত ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান, মির্জা গোলাম আযম ও নাদিরুজ্জামান। বাতিলকৃত মনোনয়ন প্রার্থীরা হলেন, জাপা মনোনিত প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় জাপার সদস্য মোন্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, জেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম, মোস্তফা কামাল বন্ধন, অহিদুজ্জামান মোড়ল ও এসএম রাজু। এবার এখানে আ.লীগের বহু হেভিওয়েট নেতাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক কপিলমুনি ২বার ইউপি চেয়ারম্যান, পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ নেতা মো. রশীদুজ্জামান মোড়ল। এক সময়ের তিনি সিপিবি'র রাজনীতিতে ছিলেন এবং এ অঞ্চলে লবণ পানিতে চিংড়ি ঘের বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় এবং আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যদের বাদ দেওয়ায় এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে সর্বত্র চলছে উচ্ছ্বাস।