বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলক অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। জনশক্তি রপ্তানিতে আমাদের পিছিয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে দক্ষ জনশক্তির অভাব। আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যায়, প্রবাসীদের আয়েই পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু ইকোনমিক জোন, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে জনশক্তি রফতানি হয়, তাদের অধিকাংশই আধা দক্ষ বা অদক্ষ পর্যায়ের। অদক্ষ হওয়ায় এসব শ্রমিকের মজুরি হয় খুবই কম। ফলে জমিজমা বিক্রি বা ঋণ করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পর কঠোর পরিশ্রম করেও খরচের টাকা উঠানোই তাদের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। আবার কখনো চাকরিচ্যুতিসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। দেশের বাইরে বাংলাদেশের জনশক্তির সুনাম রয়েছে। কিন্তু বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করা হয়নি। অভাব-অনটন বেশি থাকা এবং আয়-উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি বিদেশে পাড়ি জমান। তবে করোনা মহামারির প্রভাবে যেসব প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছিলেন, করোনার প্রভাব কাঁটার পর তাদের অনেকেই বিদেশে গিয়ে আর কাজ পাঁচ্ছেন না। ফলে তারা আবার দেশে ফিরে আসছেন। এমন ফিরে আসা কর্মীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যান। তবে কাজ না পেয়ে, আটকে থেকে ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশির ভাগ কর্মীকে ফিরে আসতে হয়। ২০২০ সালের পর বিদেশফেরত ২১৮ জন কর্মীর ওপর জরিপ চালায় রামরু। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এক মাস এই জরিপ চালানো হয়। এই ২১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৪২ জন নারী। বিদেশে নারী কর্মীরা প্রায়ই নানা সমস্যায় পড়ছেন। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ঠিকমতো বেতনও দেওয়া হয় না। অনেককে খালি হাতেই ফিরে আসতে হয়। এতে দেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। তাই দালাল ও প্রতারকদের খপ্পর থেকে বিদেশ গমনেচ্ছুদের সুরক্ষার পাশাপাশি উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তি হিসাবে তাদের গড়ে তোলা দরকার। প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এর প্রবাহ হ্রাস পেলে কী ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এ বিষয়টিতে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ বাস্তবতা সামনে রেখে দেশে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিদেশে কর্মী হিসাবে যাদের পাঠানো হয়, তাদের দক্ষতার দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া জরুরী।