আজ ৬ ডিসেম্বর। শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে শ্রীমঙ্গল হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।
চা-বাগান, হাওর, টিলা আর সমতল ভূমিরূপের এক নান্দনিক ও শান্ত সবুজ জনপদ শ্রীমঙ্গল। মূলতঃ চা-শিল্পের জন্য অঞ্চলটি দেশে-বিদেশে সুপরিচিত। এই জনপদ, ছোট-বড় পাহাড়ি ছড়া স্বাধীনতাযুদ্ধে রক্তে প্লাবিত হয়েছিল। সিলেট বিভাগের উত্তরপূর্বে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ছিল ৪ নম্বর সেক্টরের অধীন।
সহযোগী অধ্যাপক অবিনাশ আচার্য বলেন, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শ্রীমঙ্গলে হত্যা করেছিল অর্ধ শতাধিক মুক্তিসেনা ও অসংখ্য নারী-পুরুষকে। হবিগঞ্জ সড়কের পাশে ওয়াপদা রেস্ট হাউস ও ভানুগাছ সড়কে লেবার ওয়েলফেয়ার অফিস ছিল পাকিস্তানি হানাদারদের দুটি টর্চার সেল। প্রথমটিতে টর্চার করা হতো নারীদের, দ্বিতীয়টিতে পুরুষদের। ৯ মাস ধরে যুদ্ধ চলাকালে শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলীর কলেজ রোডের শেষপ্রান্তে ভাড়াউড়া চা-বাগান, তৎকালীন বিডিআর ক্যাম্প সংলগ্ন সাধুবাবার বটগাছতলা, সিন্দুরখান, সবুজবাগ ও পূর্বাশাসহ কয়েকটি স্থান হয়ে উঠেছিল বধ্যভূমি। জায়গায় জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালাত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় ভাড়াউড়া চা-বাগানে। দিনটি ছিল ৩০ মে। একসঙ্গে ৫৭ জন চা-শ্রমিককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শহরের কলেজ সড়কের ভাড়াউড়া চা-বাগান ও বাডস মডেল স্কুল এন্ড কলেজের মধ্যবর্তী স্থানে বধ্যভূমিতে চা-শ্রমিকদের তাজা রক্ত বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। শ্রীমঙ্গল বিজিবি সেক্টর হেড কোয়ার্টারের পাশে ভুড়ভুড়িয়া পাহাড়ি ছড়া ও সাধুবাবার বটগাছসংলগ্ন বধ্যভূমিকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে নির্মিত হয় শহিদদের তালিকাখচিত স্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী ৭১’। ছুটির দিনগুলোতে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। দেখতে আসেন প্রায় শতবছর বয়সী বটকুঞ্জ ও ‘বধ্যভূমি ৭১’।
আজ ৬ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর ভারতের সীমান্ত থেকে মুক্তিবাহিনী ক্রমশ ক্যাম্প অভিমুখে এগিয়ে আসার খবরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ৬ ডিসেম্বর ভোরের দিকে পালিয়ে তারা মৌলভীবাজারে আশ্রয় নেয়। শ্রীমঙ্গলে ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসুচী গ্রহন করেছে।