ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক মজবুত। দুই দেশের মধ্যকার স্মৃতিও অনেক। দুই দেশের লোকজন পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে। সবাই এক হয়ে থাকতে চায়। দুই দেশের মধ্যে সীমারেখা আছে, তবে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে কোনো সীমারেখা নাই। এমন মন্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৫২ বছর পূর্তি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা (অব.) লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতে সাথে আমাদের যুদ্ধের অনেক স্মৃতি আছে। দেশটির সাথে আমাদের সম্পর্ক চির অটুট থাকবে। আমাদের বাউন্ডারিতে সীমারেখা আছে, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে কোনো সীমারেখা নাই। আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি। আমরা এক হয়ে থাকতে চাই সবার সুখে-দুঃখে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের কাছে তখন কোনো ওয়ারলেস বা যানবাহন ছিল না। আমাদের যোগাযোগের উপায় ছিল শুধু একে অন্যের সাথে কথা বলা। অন্য কিছু ছিল না। আমরা পরের দিন বাঁচব কি মরবো সেটাও সুনিশ্চিত ছিল না। আমরা যারা তখন দেশের মধ্যে ছিলাম এভাবেই যুদ্ধ করেছি। জীবন বাঁচাতে ভারতে আমাদের শরণার্থীরা সে সময় আশ্রয় নিয়েছিল। সকালে শরণার্থী শিবিরে যদি এক হাজার লোক থাকতো; সন্ধ্যায় হয়ে যেত দুই আড়াই হাজার, ৩ হাজার। এরকম অবস্থায় ভারত সরকার সব ধরনের সহযোগিতায় মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যখন রোহিঙ্গারা একইভাবে তাদের দেশ (মিয়ানমার) থেকে বিতাড়িত হচ্ছিল, লাখো মানুষ কেউ সাঁতরে, কেউ নৌকায় বর্ডার দিয়ে চলে আসছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীকে আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কি তাদের (রোহিঙ্গাদের) আসতে দেব? শেখ হাসিনা তখন বললেন, ‘তোমরা কি ভুলে গেছ জীবন রক্ষার জন্য বন্ধু দেশ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলে? এক কোটির মত মানুষ, তোমরা আশ্রয় নিয়েছিল সেটা কি ভুলে গিয়েছিলে?’ ভারতে আমরা যেভাবে গিয়েছিলাম ঠিক একই চিত্র মিয়ানমারে দেখি। নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করার জন্য সব সময়ই একটি পক্ষ সচেষ্ট থাকে। সেসব যেন না হয়, এরজন্যই নির্বাচন কমিশন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে বলে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, প্রতিনিয়তই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা আটক করা হচ্ছে। আমরা সব সময়ই তাদের চিহ্নিত করে আসছি, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এদের বেশির ভাগই এখন জেলখানায়, না হয় দেশত্যাগ করেছে। বিদেশে যারা আত্মগোপন করেছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আনাও হয়েছে। সীমান্তে অস্থিরতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে হত্যার সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়েও মিটিং হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, সীমান্তে নন লিথ্যাল অস্ত্র ব্যবহার করার। নির্বাচন উপলক্ষে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তারা প্রশাসনিক পর্যায়ে কিছু পরিবর্তনের কথা বলেছেন। নিরাপত্তা বাহিনী সব সময়ই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কাজে রয়েছে। যাদের কাছে অস্ত্র রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ড. খন্দকার বজলুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার শ্রী প্রণয় কুমার ভার্মা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, অধ্যাপিকা ড. নাসরিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন।