বিশ্বের যেসব দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি সে সব দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এগিয়ে। আর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং শিল্পনগরী গাজীপুর তো বায়ুদূষণে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তুলতে ব্যস্ত। দেশের আবহাওয়া যেসব কারণে দূর্ষিত হচ্ছে তার অন্যতম কারণ ইটভাটা। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ইট তৈরির তোড়জোড় শুরু হওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। দেশে শুষ্ক মৌসুমে পাঁচ থেকে ছয় মাস ইট উৎপাদিত হওয়ায় একদিকে বায়ুমণ্ডলে ধুলাবালির প্রাদুর্ভাব বাড়ে, অন্যদিকে ইটভাটাগুলো থেকে নির্গত দূষিত উপাদানের কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায় বেশি। এছাড়া ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে নিষ্কাশিত হয়। ওই বর্জ্য পানিতে মিশে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান যেমন- লেড, ক্যাডমিয়াম, জিংক ও ক্রোমিয়াম জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলের দ্বারা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সারা দেশে ইটভাটাগুলো চলছে মালিকদের খেয়ালখুশিমতো। ইটভাটার মালিকদের অনেকেই আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ইটভাটার সংখ্যা আট হাজার ৩৩টি। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৫১৩টিরই পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। তাছাড়া সরকার ইতোপূর্বে ইটভাটায় জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণের যে শর্ত বেঁধে দিয়েছিলো, প্রায় তিন হাজার ইটভাটা সেই প্রযুক্তি গ্রহণ করেনি। এই ইটভাটাগুলোও আইনত অবৈধ। এই প্রেক্ষাপটে ইটভাটার জ্বালানি হিসাবে গাছপালা কেটে কাঠ পোড়ানো বন্ধ করাসহ অবৈধ ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। বায়ুদূষণ রোধে সরকারের উদ্যোগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) বিল ২০১৩’ সংশোধনে বিল পাস হয় সংসদে, সেই বিল পাসের পর পর্যায়ক্রমে ইটের বদলে ব্লক ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা। তবে সরকারি এ ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রস্তুতি খুবই কম। দেশে ৭ হাজারের বেশি ইটভাটায় ইট তৈরি হলেও ব্লক তৈরি করছে মাত্র ৪০টি প্রতিষ্ঠান। তাই এ দূষণ কমিয়ে আনতে হলে সরকারি সব সংস্থার মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি ও সব দিকে বিবেচনা করে সরকারকেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইটভাটা বন্ধ করতে হলে এখন থেকেই ব্লক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ইটের বিকল্প ব্লক ব্যবহারে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের সবার উচিত সারা দেশের বায়ুর মানের কথা চিন্তা করা।