বাংলাদেশে নিউমোনিয়া এখনো একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। পরিবেশের ভয়াবহ দূষণ, পুষ্টিহীনতা, দুর্ঘটনা ও নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবং স্বাস্থ্যসেবা পর্যাপ্ত না থাকায় দেশে শিশুমৃত্যুর হার এখনো উদ্বেগজনক। যেখানে আগে শিশুমৃত্যুর প্রধান কারন ছিল ডায়রিয়া, বর্তমানে নিউমোনিয়া সেই স্থান দখল করেছে। নিউমোনিয়া বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই রোগের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সমস্ত মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় আনুমানিক ২-৩ জন শিশু নিউমোনিয়ায় মারা যায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করে। বিগত কয়েক দশক ধরে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সত্ত্বেও, গত পাঁচ বছরে প্রতি হাজার জীবিত জন্মে প্রায় ৭ দশমিক ৪ জন শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। রোগীর তুলনায় হাসপাতালগুলোর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অনেক কম। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা না গেলে মৃত্যুর এই উচ্চ হার কমানো সম্ভব হবে না। সেজন্যে কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এক বছর বয়সি শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকাসহ অন্যসব টিকা সময়মতো দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া অনেক শিশুকে স্বীকৃত সেবাপ্রতিষ্ঠানে না নিয়ে নিকটবর্তী ওষুধের দোকান বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো কোনো হাতুড়ে চিকিৎসক যে ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই, সে ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করে। তাই এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে। কাজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দরিদ্র মানুষের কাছে এসব স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উপকরণ সুলভ নয়। গরিব মানুষের কাছে এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উপকরণ সুলভ করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন সম্পর্কিত সরঞ্জামের অভাব দূর করা না হলে যেভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুসংখ্যা বাড়বে তেমনি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যু বাড়ে। ফলে নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগে শিশুমৃত্যু কমাতে দূষণমুক্ত পরিবেশ যেন নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। দেশে নিউমোনিয়া চিকিৎসার সুযোগ আরো বাড়াতে হবে। শীতকালে ‘ফিল্ড হসপিটাল’ পরিচালনার উদ্যোগের পাশাপাশি মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। বায়ুদূষণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তা শুধু নিউমোনিয়া কিংবা শ্বাসতন্ত্রের রোগ নয়, আরো অনেক রোগ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে। তাই দূষণ কমাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।