স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রায় যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি মাইলফলক। এবার উন্নত দেশের মতো এবার বাংলাদেশেও চালু হতে যাচ্ছে রোগীদের জন্য হেলথ আইডি সম্বলিত হেলথ কার্ড। জাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যক্তিগত তথ্যের ন্যায় এই কার্ডে থাকবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বাস্থ্যসেবা তথ্য। কার্ডটি বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্যখাত ডিজিটাল করার লক্ষ্যে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আরও সহজতর করতে, বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে এই হেলথ কার্ড করা হচ্ছে। জানা গেছে, একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন কার্ডের সঙ্গে মিল রেখে স্বাস্থ্য কার্ড করা হবে। প্রতিটি স্বাস্থ্য কার্ডের ওপর ভিত্তি করে ওই ব্যক্তির হেলথ প্রোফাইল তৈরি হবে, যাতে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। একজন রোগী যখন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাবে, তখন এই কার্ড দেখে চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিতে পারবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র, পুরনো প্রেসক্রিপশন বহন করতে হবে না। সব তথ্যই সেখানে সংরক্ষিত থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকল সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বাস্থ্য তথ্য আদান প্রদান এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য তথ্য সংরক্ষণের একক প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করার লক্ষ্য নিয়ে ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের উদ্যোগে শুরু হয়েছে এই উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বর্তমানে ঢাকা মহানগরের মধ্যে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) ও ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জের সকল সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান/ হাসপাতালে রোগীদের হেলথ আইডি প্রদান কার্যক্রমের পাইলটিং শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সরকার খুব শীঘ্রই স্বাস্থ্য কার্ডের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইটের যাত্রা শুরু করবে। যেখানে রোগীরা যে কোন সময় যে কোন জায়গা থেকে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে যেতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, হেলথ আইডি প্রাপ্তির জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণকালে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর (১৮ বছরের নিম্নে) এর কপি সহ হাসপাতালে যেতে হবে। পরে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা হাতে পেয়ে যাবেন এই কার্ডটি। এছাড়া খুব শীঘ্রই দেশের অন্যান্য সকল সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালে শুরু হবে এই ডিজিটাল পদ্ধতি। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসাপাতালগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ডিজিটাল পদ্ধতির আওতাভুক্ত হবে। চিকিৎসা গ্রহণকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত যে কোন সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন পত্র দেখালেই, উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার কিংবা বুথে গেলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে কার্ডটি তৈরি করতে সাহায্য করবে তারা। জানা যায়, এই হেলথ কার্ডের কাজ হলো বাংলাদেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে অটোমেশনের আওতাভুক্ত করা। ‘শেয়ারড হেলথ রেকর্ড’ এর মাধ্যমে সকল প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ভাবে সংযুক্তীকরণ। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে নিজস্ব ‘হেলথ আইডি’ নম্বর থাকবে। সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নির্ণয় করা হবে। চিকিৎসাসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি হবে। নাগরিকদের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও সুশৃঙ্খল হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রোগীদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল স্বাস্থ্য সেবার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এই ডিজিটাল ডাটাবেজে। পূর্বের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাগজ হারানোর ভয় থাকবে না। রোগীর বহন করে নিতে হবে না কোন কাগজ। অনলাইনেই থাকবে সব তথ্য। শুধু হেলথ কার্ডের বদৌলতেই রোগী পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা। সকল পরীক্ষা-নীরিক্ষার রিপোর্ট চলে যাবে রোগীর ইমেইল এড্রেসে। অনলাইনে ঘরে বসেই রোগীরা হাসপাতালে এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। সমগ্র সম্ভাব্য প্রক্রিয়ায় রোগীর তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এদিকে শুধু সরকারি হাসপাতালই নয়, হেলথ কার্ডের আওতায় আসবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকল বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এই সুবিধার আওতায় আনা হবে। যে সকল বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব অটোমেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন, তাদের নিজস্ব সফটওয়্যারকে শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। আর যে সকল বেসরকারি হাসপাতালের এই মুহূর্তে কোন নিজস্ব সফটওয়্যার নাই, তারা নতুন সফটওয়্যার প্রণয়নের ক্ষেত্রে শেয়ারড হেলথ রেকর্ডের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য কী কী করা লাগবে, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইডি এবং পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করে উক্ত সফটওয়্যারটি নিজস্ব সার্ভারে ইন্সটল করে প্রয়োজন মত পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারবে যেকোনো অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল। তবে অবশ্যই বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন থাকতে হবে। এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশন এবং জন্ম নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়েছে। তিনি বলেন, এটুইআইয়ের মাধ্যমে তারা আমাদের এসব তথ্য দিচ্ছেন। অফিসিয়াল কাজকর্ম মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। আমরা দেখতে চাচ্ছি, আমাদের সিস্টেমগুলো সব কাজ করছে কি না, সেটা দেখার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এটা করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের পাইলটিং করব। স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, স্বাস্থ্য কার্ড করতে পারলে তা হবে খুবই ভালো কাজ। তিনি আরও বলেন, সারা দেশে করতে হলে এর জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করতে হবে। এজন্য অতিরিক্ত লোক লাগবে, যারা তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ, চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এরজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে- সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন তিনি।