ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় সম্প্রতী রাতের আঁধারে বসতভিটে ঘেষে এবং ফসলী মাঠ থেকে বেকু মেশিন দিয়ে গভীর খনন করে ট্রাকে বালুমাটি পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে চলেছেন ভুক্তভোগী দুস্থ পরিবারগুলো। উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখার ডাঙ্গী গ্রামের পাকা সড়কের পাশ দিয়ে বসতি পরিবার ঘেষে এবং পদ্মা পারের বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠ থেকে রাতভর বালু মাটি উত্তোলনের পর তা ট্রাকে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে চলেছেন সাবেক ইউপি মেম্বার জুলহাস শিকদার (৪৫)। এ ছাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামের পদ্মা পারে ফসলী মাঠ ঘেষে সরকারি খাস জমি থেকে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় হাসান (২৬) ও তার অংশীদাররা মিলে পাচার করে চলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে উপজেলার ভাঙন কবলিত পদ্মা পার থেকে পুকুরের ন্যায় গহিন করে বালুমাটি পাচারের ফলে বর্ষকালে বসতভিটে ও ফসলী জমি ধ্বংস হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে চলেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
সোমবার বিকেলে উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখার ডাঙ্গী গ্রামে সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ মৃত জমির মন্ডলের ছেলে ওয়ারিশ মন্ডল (৭০) জানায়, “ পদ্মা নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে রাস্তার পাশে ৫ কাঠা জমিতে বাড়ী করে আছি। কিছুদিন ধরে এলাকার সাবেক মেম্বার জুলহাস শিকদার আমার বসতভিটে ঘেষে অনেক ফসলী জমি থেকে বেকু মেশিন দিয়ে গভীর করে মাটি কেটে রাতভর ট্রাকে ট্রাক বিক্রি করে চলেছে। সে আরও জানায়, মেম্বার যেভাবে পুকুরের মত গভীর করে মাটি খনন করছে তাতে বর্ষকালে আমার ভিটে থাকবে না। আমি দিন আনি দিন খাই, তাই আমার কথা কেউ শোনে না”। আরেক কৃষক জলিল ফকির (৬৫) জানায়, “পদ্মা পারে ফসলী মাঠ থেকে যেভাবে বড় বড় গর্ত করে মাটি খুদে বিক্রি করা হচ্ছে তাতে এ ফসলী মাঠও পদ্মার ভাঙনের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে”।
আর মাটি ব্যাবসায়ী সাবেক মেম্বার জুলহাস শিকদারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, “ ভাই এ বছর আমি ঋণ করে একটি ট্রাক কিনেছি। তাই আমার জমি থেকে আমার ট্রাক দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছি। এখন মাটি কাটা বন্ধ হলে আমার অনেক লোকসান হবে”।
এদিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে ভাঙন কবলিত পদ্মা পারে ফসলী মাঠ ঘেষে ছাত্রলীগ নেতারা রাতের আঁধারে বেকু মেশিনে বালু উত্তোলন করে ট্রাকে পাচার বাণিজ্য চালাচ্ছে বলেও কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে। তারা পদ্মা পারের খাস জমি কেটে বালুমাটি বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ। সোমবার বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় হাসান বলেন, “শুধু আমি একা নয়, আমরা কয়েকজন মিলে পদ্মা পারের চটান জমি থেকে অল্প গভীর করে মাটি কেটে বিক্রি করছি”।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) শাহনাজ পারভীন বিথীকে অবগত করলে তিনি বলেন, “ আমার নতুন পোষ্টিং হয়েছ। মাত্র ক’দিন আগে উপজেলা সদরে হাজীডাঙ্গী গ্রামে মোবাইল কোর্ট করে এক ছাত্রলীগ নেতার ড্রেজার ধ্বংস করেছি এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানও করেছি। এখন আরও অভিযোগ পাচ্ছি। যথাসময়ে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে”। একই দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী মোর্শেদ বলেন, বিষয়গুলো আমি খোঁজ নিয়ে ব্যাবস্থা নেবো”।