মোটামুটি অমিল নিয়ে দুজনার মিলেমিশে থাকাকেই দাম্পত্য বলে! একজন ঘুরতে ভালোবাসলে আরেকজন শুয়ে থাকতে ভালোবাসবে-এমন বৈপরীত্য না থাকলে ভালোবাসার কেমিস্ট্রি ঠিকঠাক জমে না। একজন অতিকথন করলে আরেকজন শব্দের হরতাল পালন করবে-তবেই তো কাছাকাছি আসতে সুবিধা হয়!
দু'জনার পছন্দণ্ডঅপছন্দে যতবেশি অমিল তাদের ভেতরে ততবেশি মিল হলেও হতে পারে! তবে হয় না! সময়ের সাথে সাথে পছন্দণ্ডরুচির দূরত্ব আরও বাড়ে তবুও সঙ্গ-নির্ভরতা বেড়ে যায়! দু'জন দু'মেরুর হয়েও সেক্রিফাইসের জোড়ে সম্পর্ক টিকে যায়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধন সুদৃঢ় হয়!
পছন্দণ্ডবিশ্বাস নিয়ে কে কার মধ্যে লীন হবে সে বিতর্ক আপেক্ষিক তবে পারিবারিক শান্তি নিশ্চিত না হলে ঘরে নরক নামে। সন্তানের বিকাশ ঠিকঠাক হয় না। দু'জনার দু'জনের প্রতি মায়া না জন্মালে বিশ্বাস মজবুত থাকে না। চায়ের রং নিয়ে পছন্দণ্ডঅপছন্দের প্রশ্নে, জ্যোছনা-বৃষ্টি নিয়ে বিতর্কের দ্বন্দ্বে একজন আরেকজনকে হারায় না।
বিচ্ছেদের ভিন্ন কারণ থাকে। তবে যতকাল, যতভাবে একসাথে থাকা সম্ভব, যতোবেশি ছাড় দিয়ে মানিয়ে নেয়া সম্ভব ততটুকু চেষ্টা করা উচিত। শরীরের গন্ধের মূল্য আছে, গোপনীয়তার মর্যাদা আছে-সেটা জনে জনে তুলে দেয়া ঠিক না। যে বৈধতা মর্যাদাগতভাবে নিম্নস্তরের সেটাকে চর্চার চিন্তা মাথা থেকে চিরতরে ঝেড়ে ফেলা উচিত। শুরুতে খাপখাওয়ানো কঠিন। কিন্তু একবার মানিয়ে নেয়া গেলে মুহূর্তের অনুপস্থিতিতেও বিরহভাবের স্বভাব হবে।
ত্যাগের পিরামিডে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার সোপান রচনা করতে হয়। একজন আরেকজনে বুঝতে, পরস্পরকে জানতে ও জানাতে অনেক সময় দেয়া হয়েছে বলেই দাম্পত্যের মেয়াদ আমৃত্যু! একজন আরেকজনকে ছেড়ে যাওয়ার মধ্যে সফলতা নাই বরং মিশে থাকাকেই সাফল্য বলে। মনের দূরত্ব যত কমবে, পছন্দণ্ডঅপছন্দ যত মিলবে ততবেশি পরস্পর পরস্পরকে ছুঁইবে। দাম্পত্যের মত সৌন্দর্য আর কিছুতে নাই যদি ক্ষণগুলোকে উদযাপন করা যায়! পরস্পরের বোঝাপড়া দৃঢ় হয়!
হার-জিতের সম্পর্কে দাম্পত্য দাঁড়ায় না! এখানে হারের পক্ষ এবং জয়ের দল একটাই। হয় দু'জন হারবে নয়তো দু'জনে জিতবে! কেউ কাউকে পাছে ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার সুযেগ নাই। কেউ কাউকে দমিয়ে রাখার প্রশ্ন ও প্রয়োজন অবান্তর। একসাথে বাঁচার জন্য, একাত্মায় মিলেমিশে থাকার জন্য বেশিবেশি ছাড় দিতে হবে।
পাহাড়ে ঘুরতে হবে, সাগরে ডুবতে হবে। জ্যোছনায় ভিজতে হবে, গল্পণ্ডগানের আসরে হাত মুঠোয় রাখতে হবে। কবিতার শব্দে জড়াজড়ি করে আমি তুমি হয়ে যাবে, তুমি-আমি! জমানো কথা শুনতে হবে, ব্যথার মলম হতেই হবে। যখন জীবনের সাথে জীবন মিশে যায় তখন একজীবনের গল্প পড়ে লাভ নাই। দুই জীবনের যৌথপথ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা নিতে হবে। একজনের সুযোগ-সামর্থ্য এবং সক্ষমতা বুঝে তবেই আব্দার করতে হবে। জিম্মি করে ভালোবাসা আদায় করা যায় না। ভেতর থেকে সৃষ্টির জন্য আলতো করে ছুঁয়ে দিতে হবে! বোকা বোকা আব্দার করতে হবে! একজলে গোসল করতে হবে! (রাজু আহমেদ, কলাম লেখক)