বিশ্বে বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা এখন অন্যতম। অবস্থা এত খারাপ হয়েছে যে, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে বাড়ছে বায়ু দূষণ। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নির্মাণকাজ বাড়ায় বেড়ে গেছে ধুলাও। যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় ধোঁয়াও বের হচ্ছে বেশি। শীত আসার পর থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় বাংলাদেশের ওপরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সব মিলে একদিকে শীত বাড়ছে, আরেক দিকে বায়ুমানও খারাপ হচ্ছে। এ সময়ে রাস্তায় পানি ছিটানো, যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ অন্য কার্যক্রমগুলো নিলে অবস্থা এতটা খারাপ হতো না।’ তাই সরকারকে এখন ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বায়ু দূষণ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে ভারতসহ অন্যান্য দেশে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। দূষণ কমাতে সরকারিভাবে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ, দেওয়া হয় পরামর্শ। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে চালানো হয় ব্যাপক প্রচারণা। কিন্তু ঢাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার এ বিষয়ে পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ বছরের নভেম্বর থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি তিন দিনের মধ্যে যেকোনো এক দিন দিনের কোনো না কোনো সময়ে ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। ঢাকায় যে পরিমাণ বাস চলে, তার ৭০ শতাংশের আয়ুষ্কাল শেষ। লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো চলছে, এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ নেই। অন্য দিকে, শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরের অন্তত ৫০টি স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। ঢাকার আশপাশের প্রায় এক হাজার ২০০টি ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্প কারখানা আছে, যেগুলো দূষণের অন্যতম কারণ। গবেষণা অনুযায়ী, দেশের বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশের বেশি ঘটে শিল্পকারখানা থেকে। তবুও স্থানীয় উৎস ও পরিবর্তনগুলোর দিকে কোনো নজর না দেয়ায় আমাদের বায়ুর মান আগের চেয়ে আরো খারাপ হচ্ছে। ফলে বর্তমান প্রজন্ম শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, এমনকি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বায়ুর মান ভালো রাখতে কেউ আইন কার্যকর করার ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না। তাই সরকারকে এখন সময় নষ্ট না করে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সরকারের উচিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আর্টিফিশিয়াল রেইনের ব্যবস্থা করা। যাতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি কিছুটা কমে।’