বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের জন্য যেসব উপাদানকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়, তার মধ্যে পলিথিন অন্যতম। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পলিথিন চরম হুমকি। আমাদের দেশে দিন দিন পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে, যা পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির দিকে। পলিথিনে খাবার সংগ্রহ করে তা গ্রহণের ফলে মানব শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ। আশির দশকে প্রথম দেশের বাজারে পলিথিনের ব্যবহার শুরু হয়। এখন পাইকারি বিক্রয়সহ প্রায় সব হাটবাজারেই অবাধে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। যার প্রধান কারণ হলো পলিথিন ব্যাগ খুবই সহজলভ্য ও এর দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। এক জরিপে দেখা যায়, শুধুমাত্র রাজধানীতেই প্রতিদিন অন্তত দেড় কোটি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এর যথেচ্ছ ব্যবহারে বিশেষ করে বর্ষাকালে নগর-মহানগরে পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন, নালা-নর্দমা ভরাট হচ্ছে; দূষিত হচ্ছে পানি। পলিথিন অপচনশীল পদার্থ। এর পরিত্যক্ত অংশ মাটির ভেতরে প্রবেশ করে মাটির উর্বরতা হ্রাস করে এবং মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করে যাকিনা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ, মাংস প্যাকিং করলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। উজ্জ্বল রংয়ের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম যা শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্ম প্রদাহের সৃষ্টি করে। ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগে জমাট বেঁধে রয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বুড়িগঙ্গার বর্জ্য অপসারণের যে কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল সেখানে দেখা গেছে উত্তোলনকৃত বর্জ্যরে অধিকাংশই পলিথিন। পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে বাংলাদেশে ২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিনসামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসেই জেলসহ ১০ হাজার টাকার জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বাজারগুলোতে দিব্বি প্রকাশ্যে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার সত্ত্বেও এই আইনের নেই কোন প্রয়োগ। ২০৩০ সালের মধ্যে পলিথিনের ব্যবহার ৫০ শতাংশ হ্রাস করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক তাগিদও আছে। তারপরেও প্রশাসনের চোখের সামনে পলিথিনের কারখানাগুলো চলছে এবং নাগরিকদের পলিথিনের বিকল্প দেওয়ার তেমন জোরদার উদ্যোগ নেই। তাই এখনি সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই পচনশীল পলিথিন উৎপাদনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন ও কঠোর নির্দেশনার মাধ্যমে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে হবে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই যেন নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদিত না হয় সেদিকে সরকারকে কঠোর হতে হবে।