দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা একটি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে- প্রায়ই গণমাধ্যমে এ ধরনের খবর প্রকাশিত হয় যে, যথা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৯৫ শতাংশ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় এইসকল প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়ে ব্যয় বাড়িয়া থাকে প্রায় ২৬ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ৮০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া ও খরচ বৃদ্ধির নেপথ্যে সবচাইতে বড় কারণ হিসাবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং কাজের পরিধি পরিবর্তনের বিষয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে প্রকল্পের সময় বাড়ছে, ব্যয় বাড়ছে, জনদুর্ভোগ বাড়ছে।
আমাদের দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও বেশ পুরনো। গণমাধ্যমের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে তিন শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য সময় নির্ধারণ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এসব প্রকল্পের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কতগুলো বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সময়মতো প্রকল্প শেষ না হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দু’ধরণের ক্ষতির মুখে পড়ে অর্থনীতি। নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যায়। আবার প্রকল্প থেকে যে সুবিধা পাওয়ার কথা সেটি দেরিতে পাওয়া যায়। ফলে আগে সুবিধা পেলে যে লাভ হতো সেটি আর হয় না। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, প্রকল্প শুরু করতে যতটা আগ্রহ থাকে, শেষ করতে ততটাই অনীহা দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের। প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেন সংশ্লিষ্টরা সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে পারেন না, এটি খতিয়ে দেখা দরকার। এ রকম অব্যবস্থাপনার বৃত্ত থেকে বের হতে না পারলে যেকোনো প্রকল্পের ক্ষেত্রেই অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো নিয়ে এর আগে সরকার প্রধান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি যথসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। আরও অদক্ষতা, দুর্নীতি-অনিয়মের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়, কাজ হয় নিম্নমানের। অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচ দেখিয়ে বাড়তি টাকা খরচের পথ বের করা হয়। তাই এই অভিযোগের সুরাহা করা দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ করা জরুরি। বাস্তবায়নের প্রতিটি স্তরে যথাযথ সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। এবং নির্ধারিত সময়ে যদি কোনো প্রকল্প শেষ না হয় তাহলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে আর উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে হতাশায় রাখা যাবে না। সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।