প্রতিবছরের মতো এবছর ও পাঠ্যবইয়ের ছাপার মান ও পাঠ্যবইয়ে ভুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠছে। শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই যেন নতুন বছরের উপহার। নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হলেও মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে বেশির ভাগ বই না পাওয়ার ও ছাপার কাজ দ্রুত শেষ করতে গিয়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার অভিযোগ উঠেছে। আনন্দের সাথে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছানো হলেও; এই আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে। পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্ব জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। তারা কাজটি করে তালিকাভুক্ত মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এবছর বই ছাপতে দেরি হওয়া কিংবা নিম্নমানের ছাপা কাগজ নিয়ে এনসিটিবি ও মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের দায় এড়াতে চাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মুদ্রণবিভ্রাটে সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীদের দেওয়া তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষার ৩১ হাজারের বেশি বই ফেরত নেওয়া হয়েছে। গেল বছর পাঠ্যবইয়ে ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্কের পর শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ) আকস্মিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এবার বই দুটি পাঠ্য হিসেবেই রাখা হয়নি। এতে এসব ভুল ও অসংগতি এনসিটিবি কর্মকর্তাদের চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রকাশ পায়। পাঠ্যবই ছাপায় অবনতি হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। যেখানে প্রতিটি বই ছাপার পর নমুনা কপি পরীক্ষা করার নিয়ম আছে সেখানে এতোবড় ভুল, তাহলে কেন এই নিয়ম মানা হয়নি। যাঁদের ওপর পরীক্ষা করার দায়িত্ব ছিল তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন নি। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নয়। এ দায় কেবল মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানের একার নয়, এনসিটিবিকেও এর দায় নিতে হবে। পাঠ্যবইয়ে ভুল কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেটা বাক্যগত হোক বা বানানগত। কারণ, একজন শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের শব্দ ও বাক্যগঠন সারা জীবন অনুসরণ করে। আর পাঠ্যবইয়ে এসব ভুল এটাই প্রমান করে, যারা বানান বা বাক্যগুলো লিখেছেন বা দেখেছেন তারা হয়ত যথাযথভাবে এগুলো দেখছেন না অথবা তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।’ তাই এ ভূল যেন আর না হয় সেজন্যে, মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানকে ও এনসিটিবিকে সঠিক ভাবে দায়ীত্ব পালন করতে হবে। এর পরেও যদি একই ভুল বারবার হয় তাহলে এর সাথ জরিত মূল দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এভাবে নিয়মিত পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হলে তা নতুন প্রজন্মের জন্য গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যার জের একজন শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে বছরের পর বছর। তাই এ বিষয়ে শক্ত আইনি কাঠামো থাকা দরকার। তাহলে লেখক, প্রকাশক থেকে সবাই শুরুতেই সতর্ক হবে।