ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জান্নাতুল মাওয়া সারাক্ষণ ছুটে বেড়াত। নিজ বাড়িতে মায়ের কাজে সহযোগিতা করত প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া প্রতিবেশিদের নানা কাজ করে দিত ১১ বছরের মেয়েটি সে এলাকার সবার কাছে ছিল খুব আদরের। আবার ক্লাসের রোল নম্বর ছিল এক। হঠাৎ মেয়েটি অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েক কিছুদিন ধরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন,মেয়েটির ‘ব্লাড ক্যানসার’ ধরা পড়েছে। দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে এবং চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের চাপালী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া। নওরিন তাবাচ্ছুম জেবা (১৮) নামে তার এক বড় বোন ও সাইফ আরাফাত (১০) নামে এক ছোট ভাই রয়েছে। নওরিন এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। আরাফাত এবার পঞ্চম শ্রেনীতে লেখাপড়া করছে। প্রতিটি ক্লাসে জান্নাতুল মাওয়ার রোল নম্বর এক ছিল লেখাপড়ায় অনেক মেধাবি ছাত্রী সে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছে। সবজি বিক্রেতা বাবা জাহিদুল ইসলামের পক্ষে মেয়ের এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহনের সামর্থ্য নেই। এলাকার মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৩ লাখ টাকা খরচ করেছেন মেয়ের চিকিতসার জন্য। হাসপাতালের বিছানায় মেয়েকে ছটফট করতে দেখে বাবাও কান্নাকাটি করেন। বাবা মানুষের কাছে যাচ্ছেন, মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থসহায়তা চাচ্ছেন। মেয়ে কিভাবে ভাল হবে সে চিন্তায় বাবা এখন পাগল হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গুরে বেড়াচ্ছে। জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে হঠাৎ মেয়ের ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে দেখেন। পর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ক্লিনিক থেকে দ্রুত যশোর নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বলেন। তিনি ওই দিনই বিকেলে মেয়েকে যাশোরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেন এবং বেশ কিছু পরীক্ষা করান। পরীক্ষার পরই সেখানকার চিকিৎসকেরা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় তিনি ধারদেনা করে কিছু টাকার জোগাড় করে ২৪ ডিসেম্বর মেয়েকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। আরেক দফা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মেয়েটির ‘ব্লাড ক্যানসার’ ধরা পড়ে। রাস্তার ধারে একটি দোকানের সামনে সবজি বিক্রি করেন জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন তাঁর ৩থেকে ৪,শ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে পরিবারের ৫ জনের সংসার কোনোমতে চলছিল। নিজের জমি রয়েছ ৮ শতক তার মধ্যে চার শতকের উপর রয়েছে একটি টিনের চালার বাড়ি। সঞ্চয় করা কোনো টাকাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে ৩ লাখ টাকা ধার করে মেয়ের চিকিৎসা করেছেন। বর্তমানে জান্নাতুল মাওয়ার সঙ্গে ঢাকায় আছেন তার মামা নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, চিকিৎসক অধ্যাপক আতিকুর রহমান তাঁদের জানিয়েছেন, ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারলে মেয়ের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন বছর চিকিৎসা করাতে হবে। আর এতে ব্যয় হবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এত টাকা কোন ভাবেই জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জান্নাতুলের বাবা জাহিদুল ইসলাম। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। বাড়িতে নিজের একটি গরু ছিল, সেটা ৭৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পাচ্ছেন না। সমাজের যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা যদি পাশে দাঁড়াতেন, তবে মেয়েটি হয়তো আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারত।