রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএফডিসির পাশে কারওয়ান বাজার মোল্লাবাড়ী বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন লাগার খবর আসে গত শুক্রবার রাত ২টা ২৩ মিনিটে। এর কয়েক মিনিটের মাথায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টার চেষ্টায় ৩টা ৪০মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, সিদ্দিকবাজার ও মিরপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একাধিক ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। এদিকে এ ঘটনায় দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। পরে লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, আগুনের লাগার পরেও ওই বস্তি থেকে মা-ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গ থেকে জানায়, লাশ দুটি আগুনে পোড়া। লাশের একজনের হাতে থাকা চুরি দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি নারীও অপরজন ছেলে শিশু। এর আগে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে মিডিয়া হাউজের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন দুটি মৃতদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মোল্লা বাড়ির বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ওসি এ বি এম মশিউর রহমান জানান, মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আগুনের ঘটনার পর মা ছেলে মিসিং আছে। তবে যে লাশ দুটি উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলো একেবারে পুড়ে গেছে। লাশ দুটো শনাক্ত করা যাচ্ছে না। হতে পারে লাশ দুটি মা ছেলের তবে নিশ্চিত নয়। এ ঘটনায় মা-ছেলেসহ ৪ জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। দগ্ধরা হলেন নাজমা বেগম (২৮), তার ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫), তার চাচা নুর মোহাম্মদ (২৮) ও লিয়ন (১২)। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে নাজমা বেগমকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রাখা হয়েছে। নাজমার শ্বশুর আবদুল মালেক জানান, তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে। বর্তমানে মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আশরাফ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার ছেলে ওমর ফারুকের কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। কারওয়ান বাজারের মাছ বাজারে কাজ করে সে। ওমরের স্ত্রী নাজমা শ্বশুরের ভাতের দোকানে কাজ করেন। তাদের দুই ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫) ও নাজমুল ইসলাম (১০)। তিনি বলেন, নাজমুল মাদ্রাসায় পড়ে এবং সেখানেই থাকে। বাড়িতে পাশাপাশি দুটি রুমে ছিলেন তারা। মাঝ রাতে যখন আগুন লাগে এরপর মানুষের ডাক চিৎকারে তাদের ঘুম ভাঙে। ছেলে নজরুলকে রেখেই তার বাবা মা দুজনই বাইরে বের হন দেখতে, কোথায় আগুন লেগেছে। তবে বের হওয়ার পর দেখেন তাদের পাশের ঘর পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। মুহূর্তেই তাদের ঘরেও আগুন ধরে যায়। তখন তাদের মনে পড়ে ঘরের ভেতর ছেলে ঘুমিয়ে আছে। ততক্ষণে দরজায় আগুন ধরে যাওয়ায় ঘরে ঢুকার কোনো রাস্তা খুঁজে পাঁচ্ছিলেন না। এমন সময় শিশু নজরুলের চাচা নুর মোহাম্মদ ওই ঘরের টিন ভেঙে ঘরে প্রবেশের জায়গা করেন। সেখান দিয়ে নাজমা ভেতরে প্রবেশ করে ছেলেকে নিয়ে বের হওয়ার সময় আগুনে ঝলসে যায় তার দুই হাত, মুখমণ্ডল, পিঠসহ শরীরের আরও কিছু জায়গা। পুড়ে যায় শিশুটির দুই হাত ও মুখমণ্ডল। দুই হাতে সামান্য দগ্ধ হয় নুর মোহাম্মদেরও। আবদুল মালেক বলেন, আগুন লাগার পরে ঘরের কোনো মালামাল সরাতে পারিনি। পরনের শার্ট আর লুঙ্গি ছাড়া সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরে ৬০-৭০ হাজার টাকা ছিল। ভাতের দোকানের লাভ থেকে কিছুকিছু করে জমাচ্ছিলাম গ্রামের বাড়িতে একটা ঘর দেবো বলে। কিন্তু আগুনে সব পুড়ে গেছে। একটা টিভি ছিল, ফ্রিজ ছিল, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বস্তিতে লাগা আগুন গিলে খেয়েছে ঘরের সব মালামাল ও নগদ টাকা বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, মোল্লাবাড়ি বস্তির আগুনের ঘটনায় মা-ছেলেকে নিয়ে আসা হয়। মা নাজমার শরীরের ২৩ শতাংশ ও শিশুটির ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। নাজমাকে ফিমেল হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে। তবে শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নাজমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানান, বস্তিতে আগুনের ঘটনায় লিয়ন (১২) নামে একজনকে নিয়ে আসা হয়েছিলো। তার শরীরের ৭ শতাংশ দগ্ধ হওয়ায় তাকে ভর্তি রাখা হয়েছিল। তবে তারা নিজেরাই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
তদন্ত কমিটি: অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। সদস্য সচিব উপণ্ডপরচিালক মো. ছালেহ উদ্দিন, সহকারী পরিচালক, সদস্যরা হলেন-সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক, উপসহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম এবং তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন।