আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কিন্তু দেশে দিন দিন বেড়েই চলছে শিশুশ্রম। যে বয়সে শিশুদের স্কুলে বই হাতে শৈশব কাটানোর কথা ছিল, সেই বয়সে তারা কারখানা ও ইটভাটায় কায়িক শ্রম করতে বাধ্য হয়। শিশুশ্রম সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ, কিন্তু ঘর থেকে বের হলেই শিশুশ্রমের করুণ দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। শিশুশ্রমের নির্মম বাস্তবতা পাওয়া যায় হোটেল, বাস স্টপ, ইট কারখানা, খনি, গাড়ি মেরামতের দোকান, অ্যালুমিনিয়াম প্ল্যান্ট, কারখানা, আবাসিক ভবন, মিষ্টির কারখানা, বিস্কুট কারখানা, তামাক শিল্প, চামড়া শিল্প, কৃষি, ভারী শিল্প, ইত্যাদিতে। অথচ বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার নিষিদ্ধ। অথচ, বাংলাদেশের দশ লাখের বেশি শিশু এ কাজ করছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা বলছে। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএন)-এর প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখের বেশী। তাদের বয়স ৫ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০০২-২০০৩ অনুযায়ী সারা দেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ ৮০ হাজার এ কাছাকাছি। যাদের মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে ৭ লাখ ৮ হাজার শিশু এবং এদের মধ্যে ৩ লাখ ৮৭ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা একটি শিশুর মধ্যে নিহিত, সে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে এই সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজ গঠনে অবদান রাখে। কিন্তু বর্তমানে দেশে শিশুশ্রমের অবস্থান শীর্ষক অবস্থায় পৌঁছেছে, শিশুশ্রমের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চরম দারিদ্র্য, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যু, পিতৃবিয়োগ, বাবা-মা পরিত্যাজ্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। এসব বিভিন্ন কারণে লাখ লাখ শিশু অর্থের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। শিশুশ্রম বন্ধের একমাত্র উপায় দারিদ্র্য দূর করা। কিন্তু দেশের খারাপ পরিস্থিতি বদলানো সহজ নয়। তাই দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত শিশুশ্রম বন্ধে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। শিশুশ্রম বাড়লে গোটা দেশ ও জাঁতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আজকের শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ ও প্রাণশক্তি। শিশুদের কাজ থেকে মুক্তি দিতে হবে, তাদের শৈশবে ফিরে আসতে হবে এবং শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে। শিশুশ্রম রোধে কার্যকর সামাজিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি সকল মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিলেই শিশুশ্রম বন্ধ করা সম্ভব।