মহাসড়কে ধীর শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, বসানো হয়েছে ডিভাইডার, এর পরও সড়ক দুর্ঘটনা থেমে নেই। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে কিছু সুপারিশও থাকে, কিন্তু দুর্ঘটনা থেমে নেই। নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে দেশজুড়ে। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকা-ও বলা যায়। ফিটনেসবিহীন যানবাহন তো আছেই, চালকদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে যানবাহন চালানোর কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালক এবং সড়ক-মহাসড়কে অব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। বেশির ভাগ চালক ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত নন। আবার দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে সারা দেশে ছয় হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৯০২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১০ হাজার ৩৭২ জন। গত বছর মোট দুই হাজার ৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই হাজার ১৫২ জন নিহত এবং এক হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৪৩ শতাংশ, নিহতের ২৭.২৩ শতাংশ ও আহতের ১২.৯০ শতাংশ। ৫২.৮৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে পথচারীকে গাড়িচাপা দিয়ে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে বেশি দুর্ঘটনার ২৩টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধ চলাচল, চালকের অদক্ষতা, ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চালানো, সড়কে আলো না থাকা ইত্যাদি। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সমিতির পক্ষ থেকে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা, সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গঠিত সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট শক্তিশালী করা, গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের নিবন্ধন দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ছয় মাস নির্ধারণ করা অন্যতম। মহাসড়কের নির্মাণত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা এবং মোটরসাইকেল, ইজি বাইক, অটোরিকশার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। অন্যদিকে কোনো কোনো সড়কে সড়ক বিভাজক না থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। এ ছাড়া পথচারীর জন্য নিরাপদ ফুটপাত না থাকা এবং যত্রতত্র ও অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপারের কারণে পথচারীর মৃত্যুর হারও বাড়ছে। আবার পরিবহন সেক্টরে সুশাসন ও শৃঙ্খলা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যে সুপারিশ করেন সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয় না কেন, সেটাই প্রশ্ন।