তাসকিন আহমেদের বলটি কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারলেন তানজিদ হাসান। কিন্তু মারে জোর হলো না যথেষ্ট। ধরা পড়লেন সীমানায়। হাতের ব্যাট উড়িয়ে মারলেন তিনি বাতাসে। অর্ধশত থেকে একটি মোটে রান দূরে ছিলেন তিনি। তবে হতাশাটা শুধু ব্যক্তিগত মাইলফলকের কারণেই হওয়ার কথা নয়। দলের জন্যও তো কাজটা শেষ করে আসতে পারলেন না! তার বিদায়ে বিপদ হতে পারত দলের। কিন্তু তা হতে দেননি নাজিবউল্লাহ জাদরান। প্রথম ম্যাচের মতো আবারও দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে ম্যাচ শেষ করলেন আগ্রাসী এই আফগান ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স পেল তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ের দেখা। বিপিএলের তৃতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ঢাকাকে ৬ উইকেট হারাল চট্টগ্রাম। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ২০ ওভারে ঢাকা তোলে ৬ উইকেটে ১৩৮ রান। এই রানও করতে পারে তারা এমন একজনের সৌজন্যে, যিনি একাদশেই ছিলেন না। লঙ্কান ব্যাটসম্যান দানুশকা গুনাথিলাকার কনকাশন বদলি হিসেবে খেলতে নেমে তারই স্বদেশি লাসিথ ক্রুসপুল উপহার দেন ৩১ বলে ৪৬ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় খুব একটা বেগ হয়নি চট্টগ্রামকে। ওপেনিংয়ে তানজিদের ব্যাট থেকে আসে ৪০ বলে ৪৯। পরে ৩ ছক্কায় ১৯ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংসে কাজ শেষ করেন নাজিবউল্লাহ। চট্টগ্রাম জিতে যায় ১০ বল আগে। চট্টগ্রামের রান তাড়ার শুরুটাই ছিল ঘটনাবহুল। ওয়াইডের মহড়ায় প্রথম ওভার শুরু করেন শরিফুল ইসলাম। এরপর তাকে টানা তিনটি বাউন্ডারি মারেন আভিশকা ফার্নান্দো। প্রথম চার বলে ১৯ রান দেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ান শরিফুল। ওভারের শেষ বলে ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আভিশকা। নিজের পরের ওভারে ভেতরে ঢোকা আরেকটি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ইমরানুজ্জামানকেও ফেরান শরিফুল। তবে চট্টগ্রামকে চাপে পড়তে দেননি তানজিদ। মোসাদ্দেক হোসেনকে বাউন্ডারিতে শুরুর পর তাসকিনের বল বাউন্ডারিতে পাঠান তিনি টানা তিন বলে। আরাফাত সানিকে তিন বলের মধ্যে দুটি বাউন্ডারিতে তিনে নামা শাহাদাত হোসেনও শুরুটা করেন ভালো। ৫ ওভারে ৫০ তুলে ফেলে চট্টগ্রাম। তবে এরপরই একটু আটকে যান শাহাদাত। তানজিদ অবশ্য নিজের মতোই এগোতে থাকেন। চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার শর্ট বল পেয়ে তিনি ওড়ান ছক্কায়। ৫৩ রানের এই জুটি থামে শাহাদাতের বিদায়ে। পাকিস্তানি লেগ স্পিনার উসমান কাদিরের বলে কাট করার চেষ্টায় ক্যাচ অনুশীলন করান তিনি পয়েন্টে। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাট করা ব্যাটসম্যান এবার ২২ রান করতে খেলেন ৩০ বল। শাহাদাতের মন্থর ইনিংসের পরও রান রেটের চাপ ছিল না চট্টগ্রামের। তানজিদের ব্যাটে বাউন্ডারি আসতে থাকে নিয়মিতই। কিন্তু ফিফটির কাছে গিয়ে নিজের উইকেট হারান তিনি তাসকিনকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায়। অধিনায়ক শুভাগত হোম ক্রিজে গিয়ে শুরু করেন প্রথম বলেই বাউন্ডারিতে। নাজিবউল্লাহ শুরুতে একটু সময় নেন। তবে তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ২২ রান, নিজের হাতের জোর আরেকবার দেখান তিনি। চাতুরাঙ্গার দুটি বল আছড়ে ফেলেন গ্যালারিতে। এরপর শরিফুলকে উড়িয়ে মারেন মাথার ওপর দিয়ে। পরের বলেই শেষ করে দেন ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (গুনাথিলাকা আহত অবসর ১, নাঈম ৮, সাইফ ৯, মোসাদ্দেক ০, রস ১১, ইরফান ২৭, ক্রুসপুল ৪৬, চাতুরাঙ্গা ৩, কাদির ৫*, তাসকিন ১৫, শরিফুল ১*; শুভাগত ৪-০-২০-১, আল আমিন ৪-১-১৫-২, শহিদুল ৩-০-৩১-০, বিলাল ৪-০-২৮-২, নিহাদ ৪-০-২৯-১, ক্যাম্পার ১-০-১০-১)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৮.২ ওভারে ১৩৭/৪ (আভিশকা ১২, তানজিদ ৪৯, ইমরানউজ্জামান ১, শাহাদাত ২২, নাজিবউল্লাহ ৩২*, শুভাগত ৭*; শরিফুল ৩.২-০-৪০-২, মোসাদ্দেক ২-০-১১-০, তাসকিন ৪-০-২৬-১, সানি ২-০-১৪-০, চাতুরাঙ্গা ৩-০-২৬-০, কাদির ৪-০-১৬-১)।
ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানজিদ হাসান।