বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল কিন্তু এখন ক্ষমতাসীন প্রশাসনের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার তৃণমূলের চাপে রয়েছে, বিশেষ করে যদি সেগুলি দলীয় প্রতীকে না হয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেয় দলটি। গত বছর এবং ২০২২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিভিন্ন স্থানে বর্জন করেছে। ক্ষমতাসীন দল ও বর্তমান ইসির অধীনে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এখনো রাজি নয় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মী এই প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে উৎসাহী ও আগ্রহী। ইসি এখনো তফসিল ঘোষণা না করলেও আগামী মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের প্রার্থীদের জয়ী হওয়া কঠিন হবে কারণ দলের বিপুল সংখ্যক নেতা কারাগারে এবং অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ কারণে প্রার্থীরা কার্যকরভাবে প্রচারণা চালাতে পারবেন না, এতে তাদের জয়ের সম্ভাবনা কমে যাবে। তবে বিরোধীদের ওপর সরকারের তৎপরতা এবং লাগাতার নির্বাচন বয়কটের মধ্যে অনেক তৃণমূল সদস্য দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। একের পর এক নির্বাচন বর্জন করলে দলটির সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হবে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতারা। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। বৃহস্পতি ও শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনেক জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা যোগ দেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় দলটি কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। এর পরিবর্তে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন করে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ দাবি আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে বৈঠক সূত্র জানায়। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেছেন। তারা বলেছে যে তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিরুদ্ধে,” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে যোগদানকারী বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন। তবে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলার অন্তত ১০ জন বিএনপি নেতাকর্মী বলেছেন, দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি দলীয় প্রতীক নিয়ে না হয়। তা না হলে বিএনপি ভোটারদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তৃণমূলের চাপ রয়েছে। তবে হাইকমান্ড আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। বিএনপি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বেশ কয়েকজন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী হলেও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে চান না বলে তাদের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারছেন না। কয়েকটি জেলা থেকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, দলের মনোনীত প্রার্থীরা মাঠে নামলে তারা ভোটারদের সমর্থন জোগাড় করতে পারে, যা চলমান আন্দোলনকে আরও জনসম্পৃক্ততার সাথে আরও গতি পেতে সহায়তা করতে পারে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় মনিরুল হক সাক্কু ও তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তারা দুজনেই ২০২২ সালের নির্বাচনে হেরেছিলেন। দলীয় সূত্র জানায়, হাইকমান্ড মৃদু কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কর্মসূচি আরও জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তি জন্য কাজ করছে দলটি। দাবি আদায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রাজধানীসহ বিভাগীয় সদরে সমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত রোববার দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি দুই দিনের কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ২৬ জানুয়ারি সব বিভাগীয় সদরে এবং পরদিন মহানগরে কর্মসূচি পালন করা হবে। চলতি মাসের সংসদ নির্বাচনের পর এটাই হবে দলের প্রথম পথসভা।