সড়কে মৃত্যু বাংলাদেশের মানুষের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতার অংশ। সড়কে বছরে যে প্রাণহানি হয় যুদ্ধরত অনেক দেশেও এত প্রাণহানি হয় না। বিভিন্ন খাতে আমরা অভূতপূর্ব উন্নয়ন করতে পারলেও স্বাধীনতার পর থেকেই অব্যবস্থাপনা ও সড়কে মৃত্যু যেন আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার নিত্যসঙ্গী। অদক্ষ চালক, মাদকাসক্ত চালকদের যানবাহন চালানো, লক্কড় ঝক্কড় যানবাহন, ঢিলেঢালা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, আগে যাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা, নিয়ম না মেনে ওভারটেকিং, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, পেছনের বাসকে সামনে আসতে না দেওয়ার প্রতিযোগিতা, সড়কে খানাখন্দ, সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় গতিসীমা না মানার কারণে এসব সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন। গড়ে প্রতিদিন সড়কে প্রায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেব মতে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ পেয়ে থাকে তার মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অন্যতম। তারপরও মানুষের মূল্যবান প্রাণ ঝরছে বৃষ্টির মতো। এর কারণ হিসেবে দেখা যায়, চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়, যার ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে যত দুর্ঘটনা ঘটে এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই ঘটে ২০ শতাংশ। আর শহরাঞ্চলের দুর্ঘটনার মধ্যে ৭৪ শতাংশই ঘটে ঢাকায়। সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনের বেপরোয়া গতি আর যাত্রী ও জনসাধারণের অসচেতনতাই বেশির ভাগ দুর্ঘটনার মূল কারণ। এ ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি আর মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্যে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে। এমতাবস্থায় সরকারকে এখনি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। মালিককে ফিট গাড়ি রাস্তায় নামাতে হবে। পরিবহনশ্রমিকদের আইন মানতে হবে। একইভাবে বিআরটিএ থেকে শুরু করে কোনো সংস্থাকে ছাড় দেওয়া যাবেনা। সরকারের সব বিধিনিষেধ কার্যকর করতে হবে এবং মানতে হবে। কোনো যানবাহন গতিসীমা লঙ্ঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। আইন অমান্যকারীকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবেই চালকদের শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হবে।