দেশে বেশ কিছুদিন ধরেই গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিবছরই শীত মৌসুমে দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। মূলত চাহিদানুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকাই এর মূল কারণ। তবে এবারের সংকটের ফলে শিল্প উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। গ্যাসের প্রেসার জিরো পিএসআই থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে। এর ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। শ্রমিকরা কারখানায় এলেও গ্যাস সংকটের কারণে কাজ করতে পারছেন না। গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর, নারায়ণগঞ্জসহ অনেক স্থানের বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহে বড় ভূমিকা রাখে। সম্প্রতি গাজীপুরের বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদার তুলনায় জ্বালানি সংকটে পড়েছে। তীব্র গ্যাস সংকটে পোশাক শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানার মালিকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই গ্যাস না পাওয়ার কারণে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ফলে এয়ার শিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এতে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে গার্মেন্ট মালিকদের। বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের বড় একটি অংশ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা বিসিক এলাকায় অবস্থিত। এ ছাড়া ছোট, বড় প্রায় সাড়ে ৪শ ডাইং রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। হঠাৎ করে গ্যাসের তীব্র সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে রপ্তানিমুখী এসব প্রতিষ্ঠান। শুধু শিল্পপ্রতিষ্ঠানই মুখ থুবড়ে পড়েনি। আবাসিক এলাকায়ও তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। দিনের বেলায় গ্যাস পাঁচ্ছে না গৃহিণীরা। গভীর রাতঅবধি অপেক্ষায় থেকে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে তাদের। সিএনজি স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইন ধরেও গ্যাস পাঁচ্ছে না যানবাহন চালকরা। বিকেএমইএ’র তথ্যমতে, গত ১৬ই অক্টোবর থেকে গ্যাসের কোনো প্রবাহ নেই। গ্যাসের প্রেসার জিরো পিএসআই থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গ্যাসনির্ভর কারখানাগুলোতে।এমন দৃশ্য নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরী, ফতুল্লার কাঠের পোল, জালকুড়ি, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার শিল্প এলাকাগুলোতে। গ্যাসের অভাবে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহারে ব্যয় বেড়ে গেলে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেড়ে যাবে, যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়বে। চাহিদামাফিক উৎপাদিত পণ্য সময়মতো সরবরাহ করতে না পারলে কিংবা পণ্যের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিতে, এমনকি বাতিলও করতে পারেন, যা অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এ অবস্থায় গ্যাস সংকট কাটাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। সর্বোপরি জ্বালানি খাতে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।