প্রায় সময়ই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় থাকে বাংলাদেশের রাজধানী। ঢাকা শহরের এই অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটা। ঢাকার আশপাশের ইটভাটাগুলো থেকে মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ ঘটছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড় ও গাছপালা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এ পদ্ধতিতে ইট তৈরির কারণে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের। ইটভাটায় যারা কাজ করেন, তাদের স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতি আরও বেশি। উল্লেখ্য, ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয় আমদানিকৃত নিুমানের কয়লা। এ কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণ ছাই তৈরি হয়। এ ছাড়া ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড। গবেষণায় দেখা গেছে, পার্টিকুলেট ম্যাটার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কাজেই ইট তৈরির পুরোনো পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হবে আমাদের। এ ব্যাপারে আইনও রয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত ও বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ আইন লঙ্ঘন করেই চলছে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম, যা বন্ধ করা জরুরি। বায়ুদূষণ কমাতে ১০০ দিনে রাজধানীর আশপাশের ৫০০ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এ ব্যাপারে আদালতেরও নির্দেশ রয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশে উদ্বিগ্ন এ খাতের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা। তারা বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি তুলেছেন। আমরা মনে করি, ইটভাটার পরিবর্তে সারা দেশে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরির কারখানা গড়ে তুলে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব। ইতোমধ্যেই বেসরকারি পর্যায়ে ব্লক বা ব্লক ইট তৈরির বেশকিছু কারখানা গড়ে উঠেছে দেশে। তবে এ ব্যাপারে সরকারের খুব বেশি উদ্যোগ নেই। ইটভাটা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার আগেই দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক ব্লক তৈরির কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বেসরকারি পর্যায়ে এর উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান ইটভাটার মালিকরাও হতে পারবেন ব্লক কারখানার উদ্যোক্তা। ইটভাটার শ্রমিকরাই সেখানে কাজ করতে পারবেন। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের সরকারি নির্মাণে ব্লক ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে। ব্লকের প্রসার ঘটলে কম খরচে মানসম্মত নির্মাণকাজ সম্ভব হবে। কাজেই সব দিকে বিবেচনায় ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।