অপরাধ না করেও স্বেচ্ছায় অপরাধী সেজে কারাগারে যাবার ঘটনা একের পর এক বাড়ছে। অপরাধী ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে অপরাধী সাজিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে। আর অপরাধী ব্যক্তি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারা দেশের কারাগারে এমন ভাড়ায় জেলখাটা মানুষের একাধিক এনআইডি কার্ড ব্যবহার করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন জেলা কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীর পরিবর্তে জেলখাটা ২৪ ভুয়া বন্দীকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা একাধিক এনআইডি ব্যবহার করে একাধিক বার কারাগারে ঢুকেছেন। পাঁচটি এনআইডি ব্যবহার করে একই ব্যক্তির পাঁচবার কারাগারে ঢোকার বিষয়টিও প্রিজন ইমেজ ডাটা বেজ সিস্টেমের (পিআইডিএস) মাধ্যমে ধরা পড়েছে। বন্দীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাইসহ (বায়োসেট্রিক ক্রস ম্যাচিং) নিবন্ধন করে রাখার জন্য দেশের সব কারাগারে পিআইডিএস স্থাপন করা হয়েছে। পিআইডিএস স্থাপনের কাজটি করেছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। পিআইডিএসে সব বন্দীর ব্যক্তিগত তথ্য, অপরাধের ধরন, অতীতের কর্মকা-, বন্দীকে কারাগারে দেখতে আসা ব্যক্তিদের তথ্য (ভিজিটর হিস্ট্রি) ইত্যাদি দেড় শতাধিক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ জেল ডেটাবেজের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একজনের বদলে আরেকজনের ভাড়ায় জেল খাটার ঘটনা চট্টগ্রাম কারাগারে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি, যার সংখ্যা ১৫ টি। দেশের অন্যান্য কারাগারে খুব নগণ্য সংখ্যক ঘটনা ঘটলেও এ প্রবণতা টাকাওয়ালাদের জেলখাটা থেকে রক্ষা করছে। আর যারা ভাড়ায় জেল খাটছেন, তারা যে এর জন্য খুব বেশি টাকা পাঁচ্ছেন, তা বলা যাবে না। তিন হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা প্রকৃত অপরাধী সেজে কারাগারে যাচ্ছেন, এমন ঘটনা ধরাও পড়ছে। ধরা পড়লে আদালত তাদের শাস্তি দিয়ে আবার কারাগারে পাঠাচ্ছেন। কারাগারে বন্দী আসেন ওয়ারেন্ট কার্ডসহ। এরপর কারাগারের সংস্থাপন শাখা থেকে তার তথ্য ও ছবি সংরক্ষণ করে ‘কেস কার্ড’ তৈরি করা হয়। প্রত্যেক বন্দীকে পিআইডিএসের মাধ্যমে ছাড়পত্র নিয়ে কারাগারে ছাড়তে হয়। বন্দীর কারাগারের নিবন্ধন নম্বরের পাশাপাশি পরিচিত নম্বর করা হয়। বন্দীর ১০ আঙ্গুলের ছাপ সরাসরি এনআইডি সার্ভারের সাথে ক্রস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে ভেরিফায়েড প্রোফাইল সংরক্ষণ করা হয়। পিডিআইডিসে ঢুকে সহজেই যেকোনো কারাবন্দীর সব তথ্য পাওয়া যায়। পিআইডিএস স্থাপনের ফলে আসল-নকল অপরাধী শনাক্ত করা সহজ হয়েছে। সেই সাথে এর মাধ্যমে দ্বৈত বা একাধিক জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা বন্দীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তির ১০ আঙ্গুলের স্ক্যান ও ছবি তোলার মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণের ফলে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গতিবিধি খেয়াল রাখা সম্ভব হচ্ছে। এ পর্যন্ত পিআইডিএসে ১০ লাখের বেশি আসামির তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সাবধানতার ক্ষেত্রে সচেতন হয়েছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আসামি ও ভাড়ায় জেলখাটা মানুষেরা যদি সচেতন না হন, তাহলে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। অপরাধ না করেও অপরাধী সাজায় কোনো সার্থকতা নেই। বরং বিড়ম্বনা বাড়ে, ধরা পড়লে প্রকৃত অপরাধী হিসেবে শাস্তি ভোগ করেতে হয়। তাই নাম মাত্র টাকার জন্য নিজেকে অপরাধী সাবস্থ করার পথে না হাঁটাই ভালো।