বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকায় এমন কোনো দিন নেই, যেদিন ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয় না। প্রায় প্রতিদিনই সংগঠিত হচ্ছে ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পাড়াগ্রাম, অঞ্চল কোনো জায়গায়ই নিরাপদ নয় নারী-শিশুরা। ধর্ষণ ও গণধর্ষণ শেষে হত্যার শিকারও হচ্ছেন কোনো কোনো নারী ও শিশু। কোনো কোনো ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কোনো কোনো ঘটনা থাকছে তদন্তের বাইরে। আবার যেসব ঘটনায় বিচার হচ্ছে, সেখানেও অভিযুক্তের সাজার হার খুবই নগণ্য। ফলে ক্রমেই বেড়েই চলছে এই নিকৃষ্ট ঘটনা। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালে একক ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৫৭৩ জন নারী। এর মধ্যে ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ৩৩ জন এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন পাঁচ জন। এছাড়াও এই সময়ে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ১২৯ জন। এরমধ্যে ধর্ষণের চেষ্টার পর হত্যা করা হয় তিন জনকে, ধর্ষণের চেষ্টার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। পাশাপাশি ২০২৩ সালে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১৪২ জন নারী। এর মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী। এছাড়াও এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২২ জন পুরুষ। আর প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ খুন হয়েছেন। এই ধর্ষণের মূল কারণ হলো দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায় সে তুলনায় অপরাধীর শাস্তির দৃষ্টান্ত অত্যন্তই কম। বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায় কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও তারা আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। কিছু মামলায় নিম্ন আদালতে বিচার হলেও তা আটকে যায় উচ্চ আদালতে। আপিলের নামে বছরের পর বছর ঝুলে থাকে মামলা। ফলে এক যুগ কেটে গেলেও বিচার শেষ হয় না। এতে ধর্ষণকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়। পাশাপাশি সাজার নগণ্য হারের ক্ষেত্রে ধর্ষকের সামাজিক অবস্থান, ধর্ষণের শিকার নারীর দুর্বল বায়োলজিক্যাল অ্যাভিডেন্স, সাক্ষীর অভাবও অন্যতম কারণ ধর্ষণ বৃদ্ধির। এই ব্যাধিকে রোধ করতে হলে সবাইকে এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। প্রথমত ধর্ষণকে প্রতিরোধ করতে গেলে আসলে প্রথমে পুরুষতন্ত্রের সনাতনী চেতনা নস্যাৎ করতে হবে, ধর্ষণকে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও অমানবিকতা হিসেবেই দেখতে হবে, প্রেম ভালোবাসা বিয়ের দোহাই দিয়ে ধর্ষণের বৈধতা দেওয়া যাবে না, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মুখ বন্ধ রাখার সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে এবং সর্বোপরি আইন প্রণয়ন ও কার্যকরে নির্যাতিতার প্রতি আন্তরিক ও ধর্ষকের প্রতি কঠোর হতে হবে। অভিযুক্তকে যে শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, সেটা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। শুধু দ্রুত বিচারই নয়, পাশাপাশি মানুষকে বিপথগামী করে এমন সব বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর তাহলেই সমাজ এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।